সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল

জোটকে জামায়াত-তারেকের প্রতি সমর্থন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই

কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন তাদের আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই’।

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:১৯

যাযাদি রিপোর্ট
গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ড. কামাল হোসেন সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন Ñযাযাদি

 


নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘দলীয়ভাবে বিএনপি আমাদের জোটে আছে। এটা শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি জোট। এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা ক্রমাগতভাবে আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ ভিত্তিহীন ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন তাদের আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা কোনো রাষ্ট্রীয় পদ পাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই’।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’
সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জনসমর্থনের জন্য সংশ্লিষ্ট দলগুলো কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী বা তারেক রহমানসহ অন্য কোনো বিশেষ নেতার প্রতি সমর্থন হিসেবে এই উদ্যোগকে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জনমত গঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য সব নাগরিক যেমন অবদান রাখতে পারে, সেটাই আমরা তুলে ধরব। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে- আমরা এটাই চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের এই উদ্বেগ এবং আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণফোরাম ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে সাতটি দাবির ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।’
সাতটি দাবি হলো- নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, মন্ত্রিসভার পদত্যাগ, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাহী বিভাগ বা সরকার গঠন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়া, বাক্স্বাধীনতা ও রাজনীতির সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা, জনগণের আস্থা আছে- এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাত দফা দাবি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছেছি, যার ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কাজ করে যাবে, যাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের দাবিগুলো আদায়ের জন্য আমরা এমন ব্যক্তি ও দলের সঙ্গে কাজ করব, যারা একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ এবং যারা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান যেখানে ধর্ম, জাতিগত পরিচয় ও লিঙ্গের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হবে না। আমরা বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে সমাবেশ করব।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই ঐক্যের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। এটা আগেও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এখনো বলছি, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির সঙ্গে আমাদের ঐক্য নয়। আর একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই- আমরা ঐক্য করেছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে আমাদের ঐক্যের কোনো সম্পর্ক নেই। বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে।’
গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘আমরা দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছি। কিন্তু ব্যক্তি তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কয়েকটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য করেছি। আর সেজন্য জনমত গঠনে কাজ করছি।’
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংলাপ চেয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার নিশ্চয়তার জন্য জনগণ ঐকমত্য। দেশের জনগণ এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায়, যে নির্বাচনে তারা ভয়ভীতি ও প্রভাব ছাড়া তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন।’
রোববার জাতীয় সংসদে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজন মনে করছি না। যদি কখনো প্রয়োজন মনে করি তাহলে তখন মন্তব্য করব। আর সংসদে তারা অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতেই পারে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মাথায় এসে কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’
সংবিধানের বাইরে কোনো দাবি মানা হবে না- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এই সংবিধান তো তারা সংশোধন করেছে। আগের সংবিধানে আমাদের দাবিগুলো ছিল। আমরা আগের সংবিধানে যেগুলো ছিল সেগুলোই বলেছি।’
দাবি মানা না হলে কর্মসূচি কেমন হবে জানতে চাইলে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা আপাতত সারাদেশে যে জনমত গঠন করব তার মাধ্যমে আশা করি দাবি আদায় হবে। তারপরও যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে গভীরভাবে ভেবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। দাবি আদায় না হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়েও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আগাম মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয় দেশের নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনমত গড়তে মঙ্গলবার সিলেট যাব, তারপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা সফর করব।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে একটি সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে। ওখানে আপনারও মতামত ছিল। এখন কেন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলছেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের সততা নিরপেক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সেজন্যই এই দাবি।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ, জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, মোস্তাক হোসেন, রফিকুল ইসলাম পথিক, ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।