তারেককে নিয়ে মইনুলের মন্তব্যে বিএনপিতে তোলপাড়

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

হাসান মোল্লা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একটি ফোনালাপ ফঁাস হয়েছে। সেখানে তারেক রহমানের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্যই ড. কামালকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সম্প্রতি এই ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরই তা নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার স্বাথের্ এনিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা কৌশলী অবস্থানে থাকলেও তৃণমূল নেতাকমীর্রা ক্ষুব্ধ। আর অডিও ফঁাসের ঘটনায় বিব্রত ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও। ফঁাস হওয়া ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ফোনালাপে ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি রব মজুমদারের সঙ্গে মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে কথা বলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। রব মজুমদার ফোনালাপের শেষদিকে এটা মইনুল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘একটা রিউমার উঠেছে যে, আপনি আর ড. কামাল হোসেন লন্ডনে যাচ্ছেন তারেক রহমানের সঙ্গে মিটিং করার জন্য? জবাবে মঈনুল হোসেন বলেন, ‘বাদ দেন। আমাদের মিটিং তারেকের সঙ্গে, আমরা মিটিংয়ে যাব? এটা কোথাকার ছাগল? আমরা তারেকের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্য ড. কামালকে আনছি।’ এই ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে বিএনপি নেতাকমীর্রা মইনুল হোসেনকে নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেন। অনেকে ওয়ান-এলিভেনের প্রেক্ষাপটে দুই নেত্রীকে মাইনাস করা এবং তারেক রহমানের ওপর নিযার্তনে ব্যারিস্টার মইনুলের ভ‚মিকার প্রসঙ্গও নিয়ে আসেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকমীর্রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও মইনুলের কুশপুত্তলিকা দাহ করাসহ নানাভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কথাও বলেন। কিন্তু সোমবার রাতেই মইনুল হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ায় এ নিয়ে আর কেউ প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বিএনপি সূত্রমতে, এ ধরনের ফোনালাপ ফঁাস হওয়ার পরও মইনুল হোসেনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করায় নেতাকমীর্রা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই সিনিয়র নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন, তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে হটানোর জন্য যিনি চেষ্টা করছেন তার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণ কী? নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমে দেখতে হবে এই ফোনালাপ ঠিক কিনা, দ্বিতীয়ত যদি ঠিকও হয়ে থাকে বতর্মান প্রতিক‚ল অবস্থা উত্তরণে কৌশলী ভ‚মিকায় থাকতে হবে। উত্তেজিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। বতর্মান অবস্থায় জাতীয় ঐক্য টিকিয়ে রাখতে অনেক কিছু সহ্য করতে হবে। সূত্রমতে, বিএনপির উচ্চ পযাের্য় এই ফোনালাপ নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। এক অংশ বলছে, ব্যারিস্টার মইনুল ‘মাথা গরম’ করে ওইভাবে বলতে পারেন। কারণ এর আগে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় তিনি বেশ  চাপে ছিলেন। কিন্তু অপর অংশ বলছে, তার এ কথার তাৎপযর্ রয়েছে। তিনি হঠাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ঢুকে বেশ লাইমলাইটে চলে এসেছেন। তাই সতকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ফোনালাপের বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা নীরব থাকলেও অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতা এবং তৃণমূলের নেতাকমীর্রা সরব। ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকমর্র্ীদের বক্তব্য হচ্ছে, সিনিয়র নেতারা রাজনৈতিক কৌশলের কারণে কে, কী অবস্থান নেন তা তাদের দেখার বিষয় নয়। বিএনপি বলতে তারা জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বোঝেন। সেখানে তারেকের নেতৃত্ব ধ্বংস করতে যদি কেউ কোনো অবস্থানের কথা বলে থাকেন তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, তারেক রহমান দেশের অবিসংবাদিত নেতা। দলের নেতাকমীর্রা ও জনগণ তারেক রহমানকে নেতা বানিয়েছেন। তার নেতৃত্ব ধ্বংস করার মইনুল হোসেন কে? ব্যারিস্টার মইনুল কী বললেন না বললেন তাতে কিছু যায় আসে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নিবার্চন ছাড়া বিএনপি নেতাকমীর্রা এখন আর কিছু ভাবছেন না। একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এজিএম সামসুল হক বলেন, তারেক রহমান দেশের মাটি ও মানুষের নেতা। তার নেতৃত্ব নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সেই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় বিএনপি নেতাকমীর্রা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এদিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের এই অডিও রেকডর্ ফঁাস হওয়ার পর বেশ বিব্রত হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের কাযর্করী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, অডিও ফঁাসের ঘটনায় তারা বিব্রত। ব্যারিস্টার মইনুল তো এভাবে বলতে পারেন না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো কিন্তু রয়েছে। এই অডিও ফঁাসের ঘটনার মধ্য দিয়ে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হলো। ব্যারিস্টার মইনুলের ফোনালাপের বিস্তারিত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ থেকেই অনলাইনে এ ফোনালাপ পাওয়া যায়। সেখানে রব মজুমদার নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে মইনুলকে বলতে শোনা যায়। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টার পুরো ফোনালাপটি এখানে তুলে ধরা হলোÑ মইনুল : কী খবর মজুমদার সাহেব? মজুমদার : জি, ¯øামেকুম স্যার। কেমন আছেন স্যার আপনি? মইনুল : আছি, জেলের ভাত কয়েক দিন খেতে হবে আমাকে। সে জন্য রেডি হইতেছি। মজুমদার: আচ্ছা আচ্ছা... । মইনুল: আজকে তো বেইল (জামিন) নিয়া আসলাম। কেস করছে দুটা। আরও একটা নাকি করছে। মামলা-কামলা দিয়ে এরা... মামলা-কামলার নামে হইল রাজনীতি। মজুমদার : (হাসি)। মইনুল: ঠিক আছে করুক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ এই মেয়েটার পক্ষে ফাইভ পারসেন্ট লোক, ৯৫ পারসেন্ট আমার লোক আমার পক্ষে। প্রথম আলো একটা সাভের্ উঠাইছে, যেখানে ৯৫ পারসেন্ট আমাকে ভোট দিয়েছে আর পঁাচ পারসেন্ট তার পক্ষে। একটা মেয়ে লোক যে এত বাজে হইতে পারে আমি তো জানতাম না। মজুমদার : (হাসতে হাসতে) ... লন্ডন থাকত বলে। মইনুল : কোথায় থাকত আমি জানতাম না, এখন শুনতেছি। কথাটা আমি বলেছি, খারাপ বলেছি, রাগ হয়েই বলেছি যদিও। একটা মেয়েকে এভাবে বলা ঠিক না। সে জন্য আমি তাকে ফোন করে বলেছি, দুঃখ প্রকাশ, এমনকি ক্ষমাও চাইছি। একটা মেয়েকে এভাবে বলা ঠিক নয়। আমি মাফ চাইছি। তার তো এই কাজ, এটা তো আমি জানতাম না। একটা ভদ্র মহিলাকে বললাম যখন, দেখেন আপনি আমাকে প্রভোক করছেন, আমি তাতে রাগী হয়ে গেছি, খুব। একটা ¯িøপ হয়ে গেছে আমার। একটা প্রেস রিলিজ দিয়েছি। তার পর দেখলাম ৯৫ পারসেন্ট লোকের কাছে সে বাজে বলে পরিচিত। মজুমদার : স্যার, আরেকটা নিউজ স্যার। এটা একটা রিউমার উঠছে যে, আপনি আর ড. কামাল সাহেব মিলে নাকি লন্ডন যাচ্ছেন, তারেকের সঙ্গে মিটিং করার জন্য? মইনুল: (অস্পষ্ট স্বরে) অ্যঁা বাদ দেন... মজুমদার: (হাসি) হ্যঁা স্যার? মইনুল: তারেকের সঙ্গে আমরা মিটিং করতে যাব! এটা কোথাকার ছাগল?... গোট না কাউ? ড. কামালসহ তারেকের কাছে যাব...! আমরা তারেকের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্য ড. কামালকে আনছি।...আচ্ছা দোয়া কইরেন। মজুমদার: (হাসতে হাসতে) জি ¯øামুআলায়কুম স্যার। ভালো থাকবেন।