সেবা দিতে হিমশিম

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম আলফাজ সরকার আকাশ
তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে নির্মাণ করা হয় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। শিল্পায়নের প্রসার ও শহরায়নের ফলে সেবাগ্রহীতা দিন দিন বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় ২০১২ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ভবন ও কাগজে-কলমে ৫০ শয্যার কথা সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে এর সেবার মান ভোগ করতে পারছে না রোগীরা। ৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় মেডিকেল অফিসার পদ সৃজন না করা, ৩১ শয্যার পদ দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক বা জনবল সংকট, কিছু সংখ্যক কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলা এবং অনিয়মের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ৫০ শয্যা হিসাবে দীর্ঘদিন হাসপাতালটি চলমান থাকলেও অদ্যাবধি কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন-এ ৫টি কনসালট্যান্ট পদ সৃজন করা হয়নি। ৫০ শয্যার মোট কনসালট্যান্ট ১০টি পদ যা-অ্যানেসথেসিয়া-১, মেডিসিন- ১, সার্জারি-১, গাইনি-১, শিশু-১, কার্ডিওলজি-১, অর্থোপেডিকস-১, চক্ষু ১, নাক-কান-গলা-১, চর্ম ও যৌন-১ থাকলেও রয়েছে ৫টি পদ। এখনো হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদ ২টি যার ২টিই শূন্য। ৯টি সাবসেন্টারের ৯ জন মেডিকেল অফিসারের ৩ জন ঢাকায় ডেপুটেশনে, ৪ জন হাসপাতালে কর্মরত। বর্তমানে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদ ২টি থাকলেও সে দুইটিও শূন্য রয়েছে। ১০টি কনসালট্যান্ট পদের মধ্যে অদ্যাবধি ৫টি (কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন) কনসালট্যান্ট পদ সৃজন করা হয়নি। বর্তমানে সার্জারি, মেডিসিন, অ্যানেস্থিসিয়া কনসালট্যান্ট পদগুলোও শূন্য। শুধু ১ জন গাইনি ও শিশু কনসালট্যান্ট দিয়ে আউটডোর চালানো হচ্ছে। এদিকে, বহির্বিভাগে টিকিট ক্লার্ক পদটি এখনো সৃজন করা হয়নি। অফিস সহায়ক দিয়ে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। এ ছাড়া, স্টোরকিপার ১টি পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ২টি ফার্মাসিস্ট পদ থাকলেও দুইটিই রয়েছে শূন্য। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ফার্মাসিস্ট এনে চালানো হচ্ছে সেখানের কার্যক্রম। ওয়ার্ড বয়ের ৩টি পদ থাকলেও ২টিই শূন্য ও কর্মরত রয়েছেন ১ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ ৫টি থাকলেও ৩টিই শূন্য রয়েছে। আর কর্মরত আছেন ২ জন। তার মধ্যে আবার একজন অসুস্থ। কুক মশালচি ২ পদ থাকলেও শূন্য ১টি ও কর্মরত আছে ১ জন। আয়া ২টি পদ থাকলেও শূন্য ১টি। কর্মরত রয়েছেন ১ জন। নাইটগার্ড ২ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১ জন। শরীরে ব্যথা নিয়ে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সোনাকর গ্রাম থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন বৃদ্ধ কফিল উদ্দিন। তিনি জানান, টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর জন্য ৩০ মিনিট ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েকজন বলল, ১৩২ ডাক্তার ১ জন। লাইনে এখনো রোগী আছে ৭০ জন। রাজাবাড়ি ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ী জিউসি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার জানান, আমরা গরিব মানুষ। প্রাইভেট ক্লিনিকে ৫০০-১০০০ টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখানোর সক্ষমতা নাই। যেকোনো অসুখ হলে সরকারি হাসপাতালে আসি। সেখানে ডাক্তার না পাইলে আমরা কই যামু। গোসিংগা ইউনিয়নের পটকা গ্রামের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আসমা আক্তার বলেন, কয়েকটি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের গেইটে ঢুকতেই কয়েকজন দালাল পাশের ক্লিনিকে নিয়ে যেতে টানাটানি শুরু করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মইনুল আতিক জানান, উপজেলাটি শিল্প অধু্যষিত অঞ্চল হওয়ায় প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৬০০-৭০০ রোগী সেবা নিতে আসে। সে চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় ভবন ও যন্ত্রণাংশ থাকলেও মেডিকেল অফিসার পদ এখনো সৃজন করা হয়নি। বর্তমানে ৩১ শয্যার পদ দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। অ্যানেস্থেসিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদটি শূন্য থাকার কারণে নিয়মিত অপারেশন করা কঠিন হচ্ছে। ১ জন গাইনি ও ১ জন শিশু কনসালট্যান্ট দিয়ে আউটডোর চালাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে। আগের তুলনায় হাসপাতালের শৃঙ্খলা বৃদ্ধিসহ পরিচ্ছন্ন পরিবেশের তৈরি হয়েছে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের পরও রাতদিন পরিশ্রম করে শতভাগ সেবা চালু রয়েছে। জনবল বিষয়ে ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শেখ মুহাম্মদ হাসান ইমাম মুঠোফোনে যায়যায়দিনকে জানান, কাঠামোগত দিক থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল নিয়োগ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সর্বশেষ বিসিএস ক্যাডারের পদায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ডাক্তারের সুপারিশ চলছে। পরবর্তী নিয়োগের মাধ্যমে সারাদেশের স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসক দেওয়া হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে আদালতে রিট সংক্রান্ত জটিলতায় তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।