জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী

টকশোতে কী বলল তা নিয়ে দেশ পরিচালনা করি না

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা
অন্তর থেকে দেশ পরিচালনা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিডিয়াতে কী লিখল আর টকশোতে কী বলল ওসব নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করি না। তিনি বলেন, আছে কিছু লোক, আছে না? যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। এই অবস্থায় কিছু লোক ভোগে। আর কিছু লোক আছে হতাশায় ভোগে। আমাদের মানুষের একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে কথায় কথায় হতাশ হওয়া। আর যতই কাজ করি তারপরেও বলবে এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন? আমি একটু বলব, এটা না বলে আগে কী ছিল আর এখন কী আছে সেটা দেখলেই তো হয়ে যায়। সেটা দেখতে পারবে না। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন সংসদ নেতা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের দেওয়া উপহারের ঘর নির্মাণে দুর্নীতি বা অনিয়ম এবং সেগুলো ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার প্রশ্ন- দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা নয়। তাদের তো তদন্ত চালু রাখতে হবে, তদন্ত করে দেখতে হবে। সেগুলো (ঘর) কারা ভাঙলো? তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? তারা কেন ভাঙলো? সেটা দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলব, যে ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রত্যেকটির তদন্ত তাদের করতে হবে এবং রিপোর্ট দিতে হবে। এটাই আমার কথা।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বলতে গেলে ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কম করে হলেও ১০ লাখ মানুষকে আমি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এবার যে ঘটনাটি ঘটেছে, এখানে (সংসদে) একজন মাননীয় সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এটা আমরা তদন্ত করছি। নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। ১০-১২টি জায়গায় অতিবৃষ্টি হলো, সেই বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। সেখানে কিন্তু আরও অনেক ঘর ছিল। ৩০০টি জায়গায় যেখানে প্রত্যেকটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে। পুরো বিষয় তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা-জানালায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ফ্লোরগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি আগামীতে সংসদে ওই ছবিও দেখাব। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি। এটা কারা করল? তবে হঁ্যা, কারা করেছে, সেটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কিছু গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করা হবে।' তিনি বলেন, 'একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বললেন, দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি বলছে, আমরা আর তদন্ত করব কী? প্রধানমন্ত্রী তো এ নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু যারা ভেঙেছে, তাদের নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছিল। এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের এ কথা বলার কথা তো নয়। এ কথা যে কর্মকর্তা বলেছেন, যদি আমি জানতে পারি তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা গরিবদের ঘর করে দেব, সেখান থেকেও টাকা মেরে খাবে? আমরা এখন কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে ঘর করে দিচ্ছি। যাতে সহজে কেউ ভাঙতে না পারে।' শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য বছরের পর বছর তিনি জেল খেটেছেন। নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য কী কাজ করতে হবে, এটা শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে, মায়ের কাছ থেকে; আমি সেটাই কাজে লাগাই। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে কি না সেটা যাচাই করি। কে কী বলল ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না, আমি করিও না। এটাই হলো বাস্তবতা।