শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ নির্বাচনের দিন থেকেই নতুন আন্দোলনে যাবে বিএনপি

সিরিজ বৈঠকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা
হাসান মোলস্না
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:১৫

ছোট দল নিয়ে সংসদে যোগদান, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা দিলেও এ নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়েছে বলে কখনো স্বীকার করেনি বিএনপি। তাই আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার গ্রহণযোগ্য করাই দলটির প্রধান টার্গেট। এ জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই অল আউট আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূতির দিন ৩০ ডিসেম্বরে বড় পরিসরে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন বছরের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আজ শনিবার বসছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি এও মনে করে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে হুট করে আন্দোলনের ঘোষণা দিলে সফল হওয়া যাবে না। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। চলতি বছরের বাকি সময়টুকু পরিকল্পনা অনুযায়ী সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার ও শরিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এককনীতিতে ঐক্যবদ্ধ করা গেলে সফলতা আসতে পারে। এ জন্য হাইকমান্ডকে সিনিয়র, মধ্যসারি ও অঙ্গদলের নেতারা পরামর্শও দিয়েছেন। দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আন্দোলন চান। আন্দোলন সফল করার মতো জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তিও আছে; কিন্তু পরিকল্পিত আন্দোলনের কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। এ জন্য কিছু সময় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। তবে বেশি সময় নেওয়ার সুযোগ নেই। চলতি বছর সাংগঠনিক পুনর্গঠনসহ বাহ্যিক কিছু বিষয়ে নিষ্পত্তি করে নতুন বছরে কঠোর কর্মসূচি শুরু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে 'কারচুপির' একাদশ নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠু করার আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই নেতার মতে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার পূর্বশত হচ্ছে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন। আগামী ফেব্রম্নয়ারিতে নতুন কমিশন গঠন হচ্ছে। এজন্য সবার গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠনে আগেই আন্দোলন শুরু করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এবার আর সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন গঠন করতে দেওয়া হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কর্মকৌশল কী হতে পারে, সংগঠনের বর্তমান অবস্থা জানতে ও দলের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর তিন দিনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে ২৮৬ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে ১১৮ জন নেতা আগামী নির্বাচন, আন্দোলনসহ নিজ দল বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নানা মতামত জানান। প্রায় সবাই নির্দলীয় সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। এ দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। পাশাপাশি কীভাবে আন্দোলন সফল হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। শতাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলেও বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে তা পর্যাপ্ত মনে করছে না বিএনপির হাইকমান্ড। এ জন্য দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণে সবার মতামতের প্রতিফলন থাকে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, 'তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং সংগঠনের অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে আরও কয়েকটি সভা করা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ কার্যনির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় বাকি রয়েছে এবং জেলা পর্যায়ের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে মিটিং করার কথা আছে। দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংলাপ হবে।' বিএনপির সিরিজ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় সব নেতাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শক্ত আন্দোলন করার পক্ষে মত দেন। এর জন্য মূল দল, অঙ্গ দলসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জবাবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বলা হয়, মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আন্দোলনের কাজটি করতে হবে। যিনি এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তিনি যেন পদ আঁকড়ে না থেকে নিজে থেকে সরে যান। সূত্র মতে, বৈঠকগুলোতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দলের কৌশল কী হতে পারে তা নিয়েও নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এ বৈঠকের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে আরও পাকাপোক্ত করা হয়েছে। আবার সারাদেশের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের আগাম বার্তা দিয়ে তাদের প্রস্তুত করার কৌশল নিয়েছেন। দলের অঙ্গ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অনেক নেতা বিগত দিনে বিএনপির কার্যক্রমকে সামনে এনে তাতে ভুল-ত্রম্নটি খুঁজে বের করে নতুন করে পথচলার পরামর্শ দিয়েছেন। আবার অনেকে নিজ এলাকার কমিটি গঠনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন। অনেকে দলের মধ্যে নিজের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে নেতাদের অনেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অবস্থাকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না, কমিটিতে স্থান পেতে নানা লবিং-তদবির করতে হয়, মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে কমিটির জন্য তদবির করতে হয়- প্রভৃতি বিষয়ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নজরে এনেছেন নেতারা। তারা বলেন, 'দল ও অঙ্গ সংগঠনের কঠোর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে রাস্তায় নেমে কোনো লাভ হবে না। আগে আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আগে নিজেদের আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সব মিলিয়ে আন্দোলন শুরুর আগে অঙ্গ সংগঠনগুলো 'ঠিক করার তাগিদ' এসেছে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকে। সূত্র মতে, তিন দিনের বৈঠকের পর বিএনপির ৯টি অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী ২টি সংগঠন পুনর্গঠনের বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন হাইকমান্ড। এ নিয়ে আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে