বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ঘোষণায় সাড়া পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়

জাহিদ হাসান
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

দেশে দীর্ঘ দেড় বছর পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও ইতোমধ্যে আরেক ভাইরাস ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মশাবাহিত রোগটি প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) সঙ্গে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবে কাজ করছে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ইতঃপূর্বে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অথবা ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়া মাত্রই মন্ত্রণালয় অথবা সিটি করপোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যাতে খবর পাওয়া মাত্রই সেই বাড়িসহ আশপাশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়। কিন্তু নগরীর হাসাপাতালে ভর্তি একাধিক ডেঙ্গু রোগী বলেছেন, 'মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তেমন কর্মকান্ড তারা দেখেননি।' এমনকি রোগীর স্বজনেরা মন্ত্রীর এ নির্দেশনাকে ফাঁকা আওয়াজ বলেও অভিহিত করেছেন।

এবার ২০১৯ সালের মতো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মারাত্মকভাবে বাড়ছে। এ প্রকোপ মোকাবিলায় গত ২৫ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার ১১তম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী ছাদবাগান অথবা বাসা-বাড়ির ফুলের টব যেন এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত না হয় সে জন্য নগরবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

সভায় মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিয়ে তার বাড়িসহ আশপাশে মশক নিধনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর কথা। সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে দাবিও করছেন।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন মো. ফকরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলজিআরডি মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন কর্তৃক হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিয়ে বাসা ও আশপাশে আঙ্গিনায় মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর নিউজ তিনিও পড়েছেন। কিন্তু নিজে আক্রান্তের পর সুস্থ হলেও মিরপুর

টোলারবাগ এলাকায় তার বাসা ও আশপাশের আঙ্গিনায় মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম দেখেননি।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ও নগরবিদরা যায়যায়দিনকে বলছেন, এবার ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বাড়ায় রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়। তারা কিছু কাজও শুরু করেছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় এলজিআরডি মন্ত্রী ও দুই সিটির মেয়র হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীর তথ্য নিয়ে বাড়ি বাড়ি মশা নিধনে কাজ করা হবে ঘোষণা দিলেও তা যথাযথভাবে হচ্ছে না। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বরসহ বিভিন্ন কীটবাহিত সংক্রামক রোগের বিস্তার ও প্রতিরোধে 'ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট সেল' বা রোগ সংক্রামক কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা সেল গঠন করার কথা বলা হলেও কার্যত তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। মূলত সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া মাত্রই রোগীর বাড়ি ও আশপাশের এলকায় মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতাল থেকে রোগীর তথ্য নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক ফগিং লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে। এটা মন্ত্রী বলার আগে থেকেই নিয়মিত চলছে। তবে কোনো দিন হাসপাতাল থেকে ২৫ জন, আবার কোনো দিন ৩০ জনের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রমে কোনো অঞ্চলে দুইজন, তিনজন বা কোনো অঞ্চলে নেই, এমনটা হচ্ছে। এমনও হয়েছে অনেক রোগীর ঠিকানা পাওয়া যায় না। তবে রোগীদের আশ্বস্ত করছি তথ্য দিলেই কার্যক্রম চালানো হবে।

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। বুধবার রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে মেয়র তাপস বলেন, 'আমাদের এক হাজার ৫০ জন মশক কর্মী ও কাউন্সিলর-কর্মকর্তাদের নিরলস কাজের মাধ্যমে ২০১৯ সালের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ডেঙ্গু রোগীদের ঘরে ঘরে গিয়েছি। ২৭ হাজারের মতো আবাসিক স্থাপনা-ভবন পরিদর্শন করেছি। যেখানে লার্ভা পেয়েছি কীটনাশক দিয়েছি। তবে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।'

এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত একশ' জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও জুনে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২৭২ জনে দাঁড়ায়। ডেঙ্গু রোগীর এ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় জুলাইয়ে আরও বেড়ে ২ হাজার ২৮৬ জন আক্রান্ত ও ১২ জনের মৃতু্য হয়। এরপর আগের সব রেকর্ড ভেঙে আগস্টে এসে ৭ হাজার ৬৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৪ জনের মৃতু্য হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২২ দিনে ৬ হাজার ৩৪৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ১৩ জন মারা গেছেন। দেশে ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর ১৬ হাজার ৭০৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে