শেখ হাসিনা কি সংলাপে পূবর্শতর্ জুড়ে দিলেন?

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চিঠি দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেনকেÑ তাতে ‘সংবিধান সম্মত সব বিষয়ে’ আলোচনার কথা আছে। এর মানে কি এই যে, প্রধানমন্ত্রী সংলাপে রাজি হলেও ‘বতর্মান সংবিধানে যা আছে সেভাবেই নিবার্চনের’ অবস্থান থেকে নড়ছেন না? ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দাবি ‘সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চন’Ñ যা মেনে নিলে সংবিধানে পরিবতর্ন আনতে হবে এবং সরকারি দল কোনোভাবেই তাতে রাজী নয় বলে বহুবার জানিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন: বিরোধীদের দাবি কতদূর মেনে নিতে পারেন শেখ হাসিনা? উপেক্ষিত হলে বিরোধীদের সামনেই বা বিকল্প কি? কাল যে সংলাপ গণভবনে শুরু হচ্ছে তার পরিণতি শেষ পযর্ন্ত কি দঁাড়াবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তো বটেই, বিশ্লেষকদের মধ্যে, এমনকি সাধারণ মানুষদের মধ্যেও প্রশ্ন আছে। বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় পাতায় বহু পাঠক মন্তব্য করছেন, এই সংলাপ অথর্বহ কিছু বয়ে আনবে তা নিয়ে তাদের ভরসা নেই। বাপি সাইদ নামে একজন লিখছেন, ‘সংলাপ হবে। দাবিগুলো উপস্থাপন করা হবে। তারপর এগুলো পক্ষে-বিপক্ষে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। সরকারি দল একটা বা দুইটা দাবি মানবে চাইবে তাও আবার শতর্সাপেক্ষে। ঐক্যফ্রন্ট ওয়াক আউট করবে। আবার ডাকা হবে এভাবে সময় ফুরিয়ে যাবে। একদিন দু’দিন করে বৈঠক চলতে চলতে অমীমাংসিত অবস্থায় ঝুলে যাবে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. তারেক শামসুর রহমান বিবিসিকে বলেন, সংলাপ ‘ফলপ্রসূ’ হবে তা তিনি নিশ্চিত করে ভাবতে পারছেন না। কারণ, তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি কতটা দাবি-দাওয়া মানতে পারবেন। ড. রহমান বলেন, ‘সংবিধানসম্মত শব্দটি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারো বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সংবিধানের ধারার বাইরে তিনি যাবেন না।’ ‘সাত দফার অন্য কিছু তিনি হয়তো মেনে নিতে পারেন, কিন্তু সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনের দাবি তিনি মানবেন সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’ ‘সংবিধান সংশোধন সরকার মানবে না’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও বলছেন, কিছু পূবর্শতর্ যে সরকার দেবে তাতে তিনি অবাক হচ্ছেন না। ‘সংবিধান সংশোধন সরকার মানবে না। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নিবার্চন করার দাবি মেনে নেয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’ তিনি বলছেন, সাত দফার অন্য কিছু দাবি হয়তো সরকার মেনে নিতে পারে, যেমন ইভিএম ব্যবহার না করতে রাজী হতে পারে, বিরোধী নেতা-কমীের্দর মামলা সম্পকির্ত দাবি-দাওয়া মেনে নিতে পারে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সেনা মোতায়েনের কথাও হয়তো সরকার বিবেচনা করতে পারে। ড. ইসলাম মনে করেন, সংবিধানের ভেতরে থেকেই নিবার্চন-কালীন একটি সরকার নিয়ে হয়তো প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করলেও করতে পারেন। ‘আপনার হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালের নিবার্চনের আগে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিএনপির কিছু নেতাকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয়া যেতে পারে, সেরকম কোনো ফরমুলা হয়তো আবারো সামনে আনা হতে পারে।’ ‘সরকারের বাইরের কিছু লোককে টেকনোক্র্যাট কোটায় উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার কথা সরকার ভাবতে পারে। সংবিধান সংশোধন না করে, সংসদ না ভেঙ্গেই সরকারে সে ধরনের পরিবতর্ন আনা সম্ভব।’ কিন্তু বিরোধী জোটের প্রধান দাবিই হচ্ছে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চন দিতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সংবিধান সংশোধন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনও মঙ্গলবার বিবিসির কাছে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংবিধান সংশোধনের দাবি তারা তুলবেন। তিনি বলেন, ‘তারাই হীনস্বাথের্ সংবিধানে সংশোধনী এনেছে ... সংবিধান এবং আইন পরিবতর্ন তো কোনা ব্যাপারই না, এক মিনিটেই তা হতে পারে।’ দাবি আদায় না হলে কী করবে বিরোধীরা? কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার যদি সংবিধান প্রশ্নে অনড় থাকে, তাহলে পরিণতি কি দঁাড়াবে? ঐক্যফ্রন্ট, বিশেষ করে বিএনপি, কি তারপরও নিবার্চন করবে? ড. তারেক শামসুর রহমান বলছেন, বিরোধীরা নিবার্চনের জন্য প্রস্তুত। ‘আমি আপনাকে একশ’ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি বিএনপি নিবার্চনের জন্য প্রস্তুত। যেটা হবে, সংলাপে দাবি-দাওয়া পূরণ না হলে তারা মানুষজনকে বলবে দেখুন আমরা সরকারের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা কিছু দিল না, এখন আপনারাই বিবেচনা করুন।’ তবে ড. মনজুরুল ইসলাম বলেন, সরকার একটা সমঝোতার চেষ্টা করবে বলে তিনি মনে করেন। এবারের নিবার্চনটি আন্তজাির্তকভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নিবার্চন যাতে হতে পারে, সেটা প্রধানমন্ত্রী চাইছেন। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, এই সংলাপ রাজনীতিতে ‘মুখ দেখাদেখি’ বন্ধের মতো অসহনীয় একটি পরিবেশ বদলাতে সাহায্য করবে বলে তার বিশ্বাস। ‘তাছাড়া আলোচনার টেবিলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। যা অতীতে কখনো হয়নি, তাও হতে পারে। আশাবাদী হওয়ার কারণ যে একেবারেই নেই, তা নয়।’ এটা ঠিক যে, সাত দফা দাবিতে সংলাপের প্রস্তাব দেয়ার পরদিনই সরকারের তা মেনে নেয়া এবং চারদিনের মাথাতেই সংলাপের দিন-ক্ষণ-স্থান চূড়ান্ত করা নিয়ে অনেকটাই বিস্মিত বিরোধী জোট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিবিসির কাছে স্বীকারই করলেন যে, সরকারের কাছ থেকে এত দ্রæত সাড়া তারা আশা করেননি। বিবিসি বাংলা