কুমিলস্নায় পূজামন্ডপের ঘটনা

কঠোর অবস্থানে সরকার

২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন কুমিলস্নায় গ্রেপ্তার ৪১, তদন্ত কমিটি হ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিহত চার, ১৪৪ ধারা জারি

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

কুমিলস্নার একটি পূজামন্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজামন্ডপ-মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষে চারজনের প্রাণহানিও ঘটেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েনসহ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দ্রম্নত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ সব হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যে ধর্মের হোক না কেন, বিচার করা হবে।' এদিকে কুমিলস্নার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে করা হয়েছে কমিটি। সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় কুমিলস্নায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় হামলার পর অনেককে আটক করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। কুমিলস্নার ঘটনা ও এর জেরে দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে দাবি করে জড়িতদের দান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। অপরদিকে আসল জায়গা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নেওয়ার জন্য সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। কুমিলস্নার ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য বুধবারই স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।' এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে না নিতে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর আগে বুধবার খুব ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর আসে যে কুমিলস্নার নানুয়ারদীঘির পূজামন্ডপের ভেতরে প্রতিমার পায়ের কাছে একটি পবিত্র কোরআন শরীফ রাখা আছে। খবর পেয়েই কুমিলস্না জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ সেখান থেকে কোরআন শরীফ নিয়ে আসেন। কিন্তু দশটা নাগাদ একটি ছবি ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে এটি দিয়ে নানা ধরনের লাইভ বক্তব্য দিয়ে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ করতে থাকেন। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর জের ধরে বুধবার দিনের বেলা কুমিলস্নার বেশ কিছু মন্দিরসহ শহরের সালাউদ্দীন রোড কালীগাছতলা ও কাপুড়িয়া পট্টির মন্ডপেও হামলা হয়। রাতে নোয়াখালীর হাতিয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মিছিল নিয়ে মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কুমিলস্নায় তদন্ত কমিটি, গ্রেপ্তার ৪১ আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না জানান, কুমিলস্না মহানগরীর নানুয়া দীঘির উত্তরপাড়ে রাস্তায় নির্মিত একটি পূজামন্ডপের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. তানভীর আহমেদ ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকিয়া আফরিনকে সদস্য করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবারও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল ছাড়াও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কুমিলস্নায় আসেন। এদিকে বিষয়টি তদন্ত করতে আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় টিম বৃহস্পতিবার সকালে কুমিলস্নায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। একই সময়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ফয়েজ আহমদ নামের প্রধান এক সন্দেহভাজনসহ ৪১ জনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিলস্না জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ফেসবুকসহ যে কোনো গুজবে কান না দেওয়ার জন্য নাগরিকদের প্রতি তারা আহ্বান জানান। ২২ জেলায় বিজিবি এদিকে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কুমিলস্না, চাঁদপুরহ দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা-ভাঙচুর-সংঘাতের পর দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা দিতে ২২ জেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বৃহস্পতিবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, 'জেলা প্রশাসনের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গা পূজার সময় নিরাপত্তা রক্ষায় এ পর্যন্ত কুমিলস্না, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ ২২টি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।' জেলা প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ চাইলে রাজধানী ঢাকাতেও বিজিবি মোতায়েন করা হবে বলে ফয়জুর রহমান জানান। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিহত চার, ১৪৪ ধারা জারি কুমিলস্নার ঘটনার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতের সেই সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালেই তিনজন নিহত এবং দুজন গুরুতর আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পরবর্তীতে আহতদের একজন হাসপাতালে মারা যান। হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর মন্দির আক্রমণ করার এ ঘটনা ঘটে। হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মোমেনা আক্তার জানিয়েছেন, নিহতরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে তারা পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন কিনা সেটি তিনি নিশ্চিত করেননি। ঘটনার পর বুধবার রাত থেকে হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সংঘর্ষের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বৃহস্পতিবার জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্যের এ কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মৌলভীবাজারে পূজামন্ডপ ভাঙচুর কুমিলস্নার ঘটনার জেরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় বেশ কিছু মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের পর বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার রাতে মন্দিরে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করেছে তারা। পাশাপাশি মধ্য রাত থেকেই টহল শুরু করেছে বিজিবি। কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী কামারছড়া চা বাগান পূজামন্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা জহর তরফদার বলেন, কমলগঞ্জে ছয়টি মন্দিরের পাশাপাশি কুলাউড়ায় আরও দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, 'আমরা সবগুলো স্থান পরিদর্শন করছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গাজীপুরে ৩ মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, আটক ২০ গাজীপুরে তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের পর ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান জানান, শহরের কাশিমপুর বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি মন্দিরের সবগুলো প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়েছে। অন্য দুটি মন্দিরের আংশিক প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। সে সময় ২০ হামলাকারীকে ধরে স্থানীয়রা পুলিশে হস্তান্তর করে।' এ ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় ও জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। বান্দরবানে মিছিল করে এসে মন্দির, বাড়িঘর ভাঙচুর বান্দরবানের লামা উপজেলায় মিছিল করে এসে মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। লামা থানার ওসির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মো. জুম্মা জানান, কুমিলস্নায় মন্দিরে কোরআন অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার সকালে 'সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা' ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল করে এসে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২-১৩ জন আহত হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে একজন এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজারে পূজামন্ডপ ও হিন্দু বাড়িতে হামলা, আটক ৯ কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় পূজামন্ডপ ও হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নয়জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিলস্নার ঘটনার জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাছারী মুরা শীলপাড়া পূজামন্ডপ ও মগনামায় হামলার ঘটনা ঘটে বলে পেকুয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান। তিনি বলেন, 'পেকুয়া সদরের বিশ্বাস পাড়ায় কেন্দ্রীয় পূজামন্ডপে একদল দুর্বৃত্ত মিছিল নিয়ে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীর সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলাকারীরা গুলি ছুড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশসহ অন্তত ৭/৮ জন আহত হয়। হামলাকারীরা গেটের সামান্য কিছু অংশ ভাঙচুর করলেও মূল পূজামন্ডপের ক্ষতি সাধন করতে পারেনি।' ওসি বলেন, পেকুয়া সদরের ঘটনার পর আরও কয়েকটি জায়গায় 'দুর্বৃত্তরা' খন্ড খন্ড মিছিল বের করে। তারা শিলখালী ইউনিয়নের কাছারী মুরা শীলপাড়া পূজামন্ডপে এবং মগনামায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে। হামলার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কুড়িগ্রামে মন্দিরে ভাঙচুর, আটক ১৮ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কুমিলস্নার ঘটনার জেরে বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, 'হামলা-ভাঙচুরের পর পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।' রাজশাহীতে সংঘর্ষ, ৫ পুলিশ আহত রাজশাহী অফিস জানায়, কুমিলস্নার ঘটনার জের ধরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার পর পুলিশের সঙ্গে মুসলিস্নদের এ সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন এসআইসহ পাঁচজন পুলিশ রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানা গেছে, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ভবানীগঞ্জ নিউ মার্কেট এলাকায় কুমিলস্নার ঘটনার জের ধরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিপন (৩৮) নামের এক ব্যক্তি বিরূপ মন্তব্য করে। এতে স্থানীয় দোকানের কর্মচারীরা তাকে ধরে পিটুনি দেয় ও নিরাপত্তারক্ষীরা একটি রুমে নিয়ে গিয়ে রাখে। পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মুসলিস্নরা এসে রিপনকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রিপনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মুসলিস্নরা। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে মুসলিস্নদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ইটের আঘাতে পাঁচ পুলিশ আহত হন। তবে মুসলিস্নদের কেউ আহত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেন পাঁচজন পুলিশ আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার পর রাজশাহী থেকে ভবানীগঞ্জে পাঠানো হয় অতিরিক্ত পুলিশ। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে পূজামন্ডপগুলোতেও। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিলেটের জকিগঞ্জে নাশকতা, থানায় মামলা সিলেট অফিস জানায়, কুমিলস্নার ঘটনার জের ধরে সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জকিগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। এ বিষয়ে সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান, বুধবার রাতে সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় ইউএনও, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ি। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে। সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মস্তুফা উদ্দিন ও পুলিশ-জনতাসহ ৩৫-৪০ জন আহত হন। পরে বুধবার দিবাগত রাতে কালিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নাশকতা সৃষ্টিকারী ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।