কাকরাইলে পুলিশ-মুসলিস্ন সংঘর্ষ লাঠিচার্জ-টিয়ারশেল-বুলেট

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কুমিলস্নার পূজামন্ডপে ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন মুসলিস্নরা -ফোকাস বাংলা
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে শুক্রবার দুপুরে পুলিশের সঙ্গে মুসলিস্নদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ পুলিশ সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক মুসলিস্ন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৫ মিছিলকারীকে আটক করেছে। এদের মধ্যে আহত দুইজনকে পুলিশ পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিলস্নায় কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে জুমার পর সাধারণ মুসলিস্নরা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাকরাইল মোড়ের দিকে এগোলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় মিছিলকারীরা বিজয়নগর, নাইটিংগেল, দৈনিক বাংলার মোড় ও পল্টন মোড়ের বিভিন্ন অলি-গলিতে ঢুকে পড়ে এবং সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। বেগতিক পরিস্থিতিতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক ও ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে বিপুলসংখ্যক মুসলিস্ন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। বেলা ২টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলাকালে কাকরাইল মোড়ের সঙ্গে সংযোগ থাকা প্রতিটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সোয়া ২টার পর ঘটনাস্থলের্ যাব সদস্যরা হন। বেলা আড়াইটার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ বলেন, 'জুমা শেষে মুসলিস্নরা মিছিল বের করেন। আমরা তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত আসি। সেখানে এসে মুসলিস্নরা কাকরাইলের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় তারা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় রমনা জোনের সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার (এসি) বায়জিদুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মহিদুলসহ পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের ইসলামিয়া সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলে কোনো দলের সম্পৃক্ততা ছিল কি না জানতে চাইলে ডিসি বলেন, এ ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল পৌনে ৩টায় ডিবি পুলিশ দুইজনকে আটক করে। এর আগে পুলিশের হাতে আটক হন আরও তিনজন। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে জুমার পর মুসলিস্নরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পুলিশ তাদের বায়তুল মোকাররম থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি দেয়। কিন্তু তারা কাকরাইল মোড়ে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় এক ঘণ্টা গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। প্রধান সড়কে পুলিশের এপিসি ও জলকামানের গাড়ি টহল দেয়। জুমার আগ থেকেই বায়তুল মোকাররম এবং এর আশপাশের এলাকায়র্ যাব ও বিজিবির উপস্থিতি ছিল। পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের পশ্চিম পাশে বিজিবি সদস্যদের এবং দক্ষিণ গেটের্ যাবকে টহল দিতে দেখা গেছে। তবে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজে ঢোকার সময় তারা কাউকে তলস্নাশি করেনি। প্রবেশের ক্ষেত্রে ছিল না কোনো ধরনের কড়াকড়িও। বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ আদায়কারী এক মুসলিস্ন জানান, ইমাম জুমার নামাজের সালাম শেষ করার সঙ্গে-সঙ্গেই বিপুলসংখ্যক মুসলিস্ন দ্রম্নত রাস্তায় নেমে পড়েন। তারা প্রথমে মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে মালিবাগের দিকে এগোতে থাকে। এ বিক্ষোভ মিছিলে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা নেতৃত্ব দেননি বলে জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভ থেকে কুমিলস্নায় কোরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্স্নোগানও দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার 'নাস্তিকদের' হেফাজত করছে এমন অভিযোগ তুলে স্স্নোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে কুমিলস্নায় কোরআন অবমাননার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ-মিছিল কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে এ আশঙ্কায় আগেভাগেই সব এলাকাতেই পুলিশি টহল বাড়ানো হয়। তবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুসলিস্নরা ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের মুসলিস্নরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেননি। বরং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও শান্তির জন্য প্রায় সব মসজিদেই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুতবায় ও নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশে সম্প্রীতি ও শান্তি কামনা করা হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তানে পীর ইয়ামেনি মার্কেট জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, বিশ্ব শান্তির প্রতীক হচ্ছেন হজরত মুহম্মদ (সা.)। আলস্নাহতায়ালা মহানবীকে বিশ্বশান্তির জন্য পাঠিয়েছেন। ইসলামের শান্তির বারতা, মহানবীর জীবনদর্শনসহ নানা বিষয়ে খুতবায় আলোচনা করা হয়। মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দেশে সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। জুমার খুতবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে আলোচনা করা হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ অন্য মসজিদেও ইসলামে শান্তির দিক তুলে ধরে মুসলিস্নদের উদ্বুদ্ধ করেন ইমাম। এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরা, আজিমপুর, মগবাজার, পান্থপথ, পুরান ঢাকার কিছু মসজিদের মুসলিস্নরাও জানিয়েছেন, খতিবরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তির পক্ষে মুসলিস্নদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।