বাজে ফিল্ডিংয়ে হারল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৭১/৪ শ্রীলংকা : ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ ফল : ৫ উইকেটে জয়ী শ্রীলংকা

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

আমিনুল ইসলাম লিটন
ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! প্রচলিত এ কথাটিই বাস্তবে ঘটল বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। বোলারদের ব্যর্থতার সঙ্গে দু-দুটি সহজ ক্যাচ ফসকে গেল লিটন দাসের হাত থেকে। প্রথমটি ১৩তম ওভারে আফিফের বল, আর দ্বিতীয়টি ১৫তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে। যার খেসারতটা ভালোভাবেই দিতে হলো বাংলাদেশকে। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫ উইকেটের হার দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ শুরু করল মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের দল। আগামী ২৭ অক্টোবর বিকাল ৪টায় আবুধাবিতে দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের আগে দুই ম্যাচে প্রথমে শ্রীলংকা ও পরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। পরে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সেরা ১২-তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। মূল পর্বের প্রথম ম্যাচেই হার দেখল মাহমুদউলস্নাহরা। রোববার শারজায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল টিম টাইগার্স। পরে ৭ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলংকা। টাইগার ওপেনার নাঈম শেখ (৬২) ও মুশফিকুর রহিমের (৫৭*) জোড়া ফিফটিতে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ, জেগেছিল জেতার আশা। রান তাড়ায় চারিথা আসালাঙ্কার উড়ন্ত সূচনার পর জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু আসালাঙ্কাকে আটকানো গেল না। তার সঙ্গে মিলে ঝড় তুললেন ভানুকা রাজাপাকসে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দুজনের ক্যাচই ফসকে গেল লিটন দাসের হাত থেকে। মাহমুদউলস্নাহ দল ভাসল হতাশায়। দলকে জেতাতে মাত্র ৪৯ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা। ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। ৩১ বলে ৫৩ করে যান রাজাপাকসে। এই দুজনেরই ক্যাচ ছাড়েন লিটন। ১৪ রানে আফিফ হোসেনের বলে বাউন্ডারি লাইনে ১৪ রানে থাকা রাজাপাকসের ক্যাচ ছাড়েন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ৬৩ রানে থাকা আসালাঙ্কার ক্যাচও ফসকে যায় তার হাত থেকে। দারুণ ব্যাট করতে থাকা লংকানদের আর থামানো যায়নি। অথচ রান তাড়ায় নামা লংকান ইনিংসে শুরুতেই আঘাত হেনেছিলেন একাদশে আসা নাসুম আহমেদ। তার চতুর্থ বলেই ঘোরাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান কুসল পেরেরা। এই চাপ সামলে এরপরই উড়ন্ত শুরু পায় লংকানরা। তিনে নেমে ঝড় তোলেন চারিথা আসালাঙ্কা। নাসুমকে পরের ওভারে দুই ছক্কায় ওড়ান তিনি। নবম ওভারে উড়তে থাকা শ্রীলংকার ডানা কাটেন সাকিব। নিশানকা ও আবিস্কা ফার্নেন্দো সাজঘরে পাঠিয়ে ওই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে মাত্র ১ রান দেন সাকিব। দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে মারতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে পড়ার শঙ্কায় ছিল তারা। কিন্তু আসালাঙ্কা দলকে রাখেন ম্যাচে, তার সঙ্গে মিলে জুটি গড়েন রাজাপাকসে। নিয়মিত বোলাররা মার খাওয়ায় অনিয়মিত বোলার আক্রমণে এনেছিলেন মাহমুদউলস্নাহ। তিনি নিজে করেন ২ ওভার, আফিফ করেন ১ ওভার। অবশ্য ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যাবে লিটনের ক্যাচ ফেলা। ওই সময় রাজাপাকসে আউট হলে চাপ বাড়াতে পারত বাংলাদেশ। আসালাঙ্কাও সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাচ ফসকে যাওয়ায় আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি। পঞ্চম উইকেটে ৫২ বলে ৮৬ রানের এক জুটিই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু করেন নাঈম শেখ ও লিটন দাস। শুরুর সময়টা সামলে পাওয়ার পেস্নতে যুঁতসই রান এনে ফেলেছিলেন তারা। দুই চারে লিটনও থিতু হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু লাহিরু কুমারাকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তিনে নেমে সাকিব অনিয়মিত অফ স্পিনার চারিথা আসালাঙ্কার বলে মেরেছিলেন দুই চার। এরপর চামিকা করুনারত্নের ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড বল পড়তে না পেরে হয়ে যান বোল্ড। ভালো শুরুর পর ৫৬ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক জুটিতে খেলার ছবি আবার বদলে দেন নাঈম-মুশফিক। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা মুশফিক এ দিন ছিলেন অন্য মেজাজে। লেগ স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সস্নগ সুইপে ছক্কা মারার পর একইভাবে ওড়ান বাঁহাতি পেসার বিনুরা ফার্নেন্ডোকেও। দেন বড় কিছুর আভাস। তার সঙ্গে মিলে এক এক করে রান বাড়িয়ে জুটি বাড়াতে থাকেন নাঈম। ৪৪ বলে তুলে নেন টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। হাসারাঙ্গা পরের স্পেলে ফিরতে তাকে আবার এলোমেলো করে দেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ৫১ বলে ৭৩ রানের। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় সেটাই। ৬ চারে ৫২ বলে ৬২ করে বিনুরার বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন নাঈম। মুশফিক চালিয়ে যান। ৩২ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। লম্বা খরা কাটিয়ে ১১ ইনিংস পর তিনি পেলেন ফিফটি। সর্বশেষ ২৮ ইনিংসে এটি কেবল তার দ্বিতীয় ফিফটি। পাঁচে নেমে আফিফ হোসেন তেমন কিছু করতে না পারলেও অধিনায়ক মাহমুদউলস্নাহ ৫ বলে ১০ করলে ১৭০ ছাড়িয়ে যায় দলের পুঁজি। রানে ভরা উইকেটে সেই রানও পরে আর যথেষ্ট হয়নি। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৭১/৪ (নাঈম ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউলস্নাহ ১০*; করুনারত্নে ১/১২, বিনুরা ১/২৭, কুমারা ১/৩১)। শ্রীলংকা : ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ (পেরেরা ১, নিসানকা ২৪, আসালাঙ্কা ৮০*, আভিশকা ০, হাসারাঙ্গা ৬, রাজাপাকসে ৫৩, শানাকা ১*; নাসুম ২/২৯, সাইফ ১/৩৮, সাকিব ২/১৭)। ফল : ৫ উইকেটে জয়ী শ্রীলংকা ম্যাচসেরা : চারিথা আসালাঙ্কা (শ্রীলংকা)।