মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাঁদা দাবি, না পেলেই ডাকাতি

মূলহোতাসহ চক্রের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

'বিদেশি নম্বর থেকে প্রথমে তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও শাহাদাত হোসেনের পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। কেউ চাঁদা না দিলে সেখানে হামলা, ভাঙচুরের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে ডাকাতি করে। তাদের কেউ পিয়ন, কেউ পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কেউ আবার অটোরিকশা চালক। এ পরিচয়ের আড়ালে তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও আদাবর এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত।'

ওইসব ডাকাতির ঘটনায় জড়িত মূলহোতা জহিরুল ইসলাম ওরফে জহিরসহ ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই থেকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব গোয়েন্দা দল ওর্ যাব-২ এর যৌথ দল। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন জসিম উদ্দিন (৩৪), জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), খায়রুল ভূঁইয়া (২০), রাকিব হাসান (২০) ও মো. নয়ন (২৮)। গ্রেপ্তাররা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছের্ যাব।

রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরের

শ্যামলীবাগ এলাকায় অবস্থিত উত্তরা মোটরসের ডিলার ইডেন অটোস নামের শোরুমের ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মোটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ক্যাশ ড্রয়ার ভাঙচুর করে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে পালিয়ে যায় একটি ডাকাত দল।

ওই ঘটনায় শোরুমের মালিক পক্ষ থেকে কে এম আবদুল খালেক শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই ঘটনায়র্ যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে করে মূলহোতা জহিরসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক কথিত সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটোস নামক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল। চাঁদা না পাওয়ায় তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেপ্তার জসিমের বাসায় জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটোস শোরুমে ডাকাতি করার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। তারা ১১ অক্টোবর ওই শোরুম রেকি করে। গ্রেপ্তার জসিম এবং জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি ক্রয় করে। পরের দিন অর্থাৎ, ১২ অক্টোবর ঢাকা উদ্যানে একত্রিত হয়ে শোরুমের সামনে আসে এবং শোরুমের লোকজন ও আশপাশের লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। জাহিদ তার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে তিনটি চাপাতি জহির, রাকিব এবং খায়রুলের হাতে দেয় এবং নিজে একটি চাপাতি নিয়ে নয়নসহ একযোগে শোরুমে প্রবেশ করে। এ সময় গ্রেপ্তার জসিম শোরুমের বাইরে অবস্থান করে ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করে। জহির শোরুমে প্রবেশ করেই চাপাতি দিয়ে ম্যানেজার সবুজকে আঘাত করে এবং রাকিব চাপাতি দিয়ে শোরুমের মোটর টেকনিশিয়ান হাসানকে আঘাত করে।

এ সময় দলের অন্য সদস্যরা শোরুমে ভাঙচুর করে। জাহিদ চাপাতি নিয়ে শোরুমের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে কাঁচের দরজা ভেঙে ক্যাশিয়ারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ অর্থ ও ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে চার/পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাকাতি সম্পন্ন করে বের হয়ে যায়।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, শোরুম থেকে বের হয়ে জহির এবং জাহিদ লেকসিটিতে জাহিদের বাসায় টাকা নিয়ে যায়। পরে নিজ নিজ ভাগের টাকা নিয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা মোহাম্মদপুর-কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য, যার সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। চক্রটি ঢাকার মোহাম্মদপুর, বছিলা, শ্যামলী এবং আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল। দাবি করা চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের নানা হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। কেউ চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তারা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করে। গ্রেপ্তারদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এছাড়া তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যবসা, চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার জহিরুল ইসলাম জহির চক্রের মূলহোতা। জহিরসহ অন্যরা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে টাকা দাবিসহ নানা অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত। জহির আগে অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে চোরাই অটোরিকশার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার নামে একটি ডাকাতি মামলাসহ মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করলেই কেউ শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে যায় না। দেশে থেকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভিওআইপি কলে ফোন করা যায়। বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করে তারা মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমার প্রমাণ হাজির করে। এরপর চাঁদা না পেলে হামলা করে। তারা ইডেন অটোস মোটর সাইকেল শোরুমে অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছিল মূলত আতঙ্ক ছড়াতে। যাতে অন্যরা চাঁদা চাইলে ভীত হয়ে দিয়ে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে