মন্ত্রীর পিএসদের শেষ সময়ের তদবির

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সামনে রেখে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিবরা (পিএস) নিজেদের পছন্দের জায়গায় যেতে মন্ত্রীর কাছ থেকে আগভাগে ডিও লেটার (ডিমান্ড অব অডার্র) নেয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েকজন মন্ত্রী আবার শেষ সময় পিএসদের ডিও লেটার না দিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিচ্ছেন। এতে মন্ত্রী ও পিএস দুইপক্ষই দুঃচিন্তায় রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, একাদশ সরকারের শেষ সময় কোনো মন্ত্রী নতুন করে কোনো কমর্কতাের্ক পিএস নিয়োগ দিতে চাইছেন না। কিন্তু মন্ত্রীরা না চাইলেও পিএসরা নিবার্চনের আগেই নিজেদের পছন্দের জায়গায় যেতে জোর তদবির করছেন। সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের একান্ত সচিব (পিএস) আকতার উদ্দিন যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে পছন্দের জায়গায় যাওয়ার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু দুভার্গ্য, তার ব্যাচের (অষ্টম) চারজনের ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে পদোন্নতি হলেও তার হয়নি। তাই এখনো তিনি মন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করলেও মন্ত্রী তাকে পিএসের অতিরিক্ত ওয়াসার প্রশাসনিক কমর্কতার্র দায়িত্ব দিয়েছেন। শ্রম ও কমর্সংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর একান্ত সচিব অমর চান বণিক উপ-সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে ডিও লেটার চাইলে প্রতিমন্ত্রী তাকে ডিও লেটার না দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেন। এ বিষয়ে অমর চান বণিক যায়যায়দিনকে বলেন, ‘পিএসের দায়িত্বের পাশাপাশি শ্রম ও কমর্সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্তিতে আছেন। মন্ত্রণালয়ের একটি লোকাল অডাের্র মন্ত্রীর পিএস হিসেবেও কাজ করছেন।’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একান্ত সচিব নাজমুল হক খানের বেলায় একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সরকারি স্কুল শাখার দায়িত্ব পেলেও পিএসের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ভিন্নতা দেখা গেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবতর্নমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের একান্ত সচিব মিজানুর রহমানের বেলায়। পদোন্নতির পর নিজ মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং পেলেও ডেস্ক ফঁাকা না থাকায় এখনো পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। জানা যায়, ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বতর্মান মন্ত্রিসভায় পূণার্ঙ্গ মন্ত্রী রয়েছেন ৩৩ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৭ জন এবং উপমন্ত্রী দুইজন। সংসদ নিবার্চনের আগে মন্ত্রীর পিএসদের শঙ্কায় থাকতে হয়। এ জন্য পিএসরা মন্ত্রীদের সাহায্যে আগভাগেই নিজের পছন্দের জায়গায় পদায়ন নিয়ে থাকেন। যদিও গতবারের মতো এবারও সংসদ বহাল রেখেই জাতীয় নিবার্চন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপরও পিএসদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পযর্টনমন্ত্রী এ. কে. এম শাহজাহান কামালের একান্ত সচিব মো. মফিজুল ইসলাম পাটওয়ারী (উপসচিব) দেড় বছর ধরে একই দায়িত্বে রয়েছেন। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের একান্ত সচিব আমিনুল ইসলাম দুই মাস আগে পিএসের দায়িত্বে আসেন। বস্ত্র ও পাটপ্রতিমন্ত্রী মিজার্ আজমের একান্ত সচিব মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের বাড়ি জামালপুর হওয়ায় এই মুহূতের্ তিনি পোস্টিংয়ের কথা ভাবছেন না। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের একান্ত সচিব সরদার মো. কেরামত আলী দুই বছর ধরে পিএসের দায়িত্বে আছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের একান্ত সচিব প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাফর উল্ল্যাহ ১০ বছর ধরে পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি হলেও কোনো ডেস্ক পাননি তিনি। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের একান্ত সচিব তরিকুল ইসলাম প্রায় তিন বছর ধরে পিএসের দায়িত্বে আছেন। গত বছর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও এখনো পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের একান্ত সচিব ড. মো. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস কিছুদিন আগে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যতদিন সম্ভব তিনি পিএসের দায়িত্বে থাকতে চান। ধমর্মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের একান্ত সচিব ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এ বছরের জুলাই মাসে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চলে যান। বতর্মানে ধমর্ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কমর্কতার্ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন পিএসের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের একান্ত সচিব অরুণ কুমার মÐল বতর্মানে চিন্তামুক্ত আছেন। তিনি এই মুহূতের্ অন্যত্র পোস্টিং নেবেন না বলে যায়যায়দিনকে জানান। তিনি বলেন, যতদিন মন্ত্রী আছেন, তার সঙ্গেই থাকবেন। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খঁান জয়ের একান্ত সচিব তারেক সালমান (উপসচিব) দুই বছর ধরে পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একান্ত সচিব শরিফুল করিম আড়াই বছর ধরে পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। মহিলা ও শিশু-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির একান্ত সচিব এসএম. লতিফ (উপসচিব) গত ১০ বছর ধরে পিএসের দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের একান্ত সচিব নাসির মিয়া যুগ্ম সচিব হয়েও একই পদে আছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর একান্ত সচিব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান (উপসচিব) দেড় বছর ধরে দায়িত্বে আছেন। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের পিএস এ. কে. এম এরশাদ আহসান হাবিব দেড় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, বতর্মানে মন্ত্রীরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, নিবার্চনকালীন সময় তাদের সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে না। রুটিনমাফিক কিছু দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রীরা। তবে মন্ত্রীদের পিএসরা যদি পদোন্নতি পান, তাহলে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই পোস্টিং নিয়ে চলে যেতে পারেনÑ এটাই স্বাভাবিক।