টিকাও এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে!

বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক 'ওমিক্রন'

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আলফা, বেটা, গামা ও ডেলটা'র পর এখন 'ওমিক্রন' ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। 'ওমিক্রন' বিশ্বে এখন নতুন আতঙ্কের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডবিস্নউএইচও'র একটি প্যানেল 'ওমিক্রন, বি ১.১.৫২৯-কে 'উদ্বেগের ভ্যারিয়েন্ট' বলে অ্যাখায়িত করেছে। প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত এটিকে অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য ভাইরাস হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরাইলে মাত্র কয়েক ডজন মানুষের দেহে ভাইরাসের এ নতুন ধরনটির সংক্রমণ ধরা পড়লেও এর জিনবিন্যাস ভয় দেখাচ্ছে। এর জিন কাঠামো এত বেশিবার পরিবর্তিত (মিউটেট) হয়েছে যে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় 'ওমিক্রন' অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং টিকাও এর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এটাও বলছেন, এ ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক বা এর আক্রমণের ধরন কতটা তীব্র হবে, টিকার সুরক্ষা এড়াতে পারবে কিনা কিংবা এর কারণে মহামারি পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা- এসব প্রশ্নের উত্তর অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য আরও সময় দরকার, প্রয়োজন আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে 'ওমিক্রন' ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে আফ্রিকার ৭ দেশে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করছে একের পর এক দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, হংকং এবং ইসরাইল ছাড়াও ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে বেলজিয়ামেও এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি মিলেছে। পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই থেকে ইসরাইলে আসা এক পর্যটক নতুন ধরনে শনাক্ত হয়। এদিকে, পরিস্থিতি জটিল তা বুঝতে বাকি নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। শুক্রবার তিনি বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টটি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে আফ্রিকার ৭ দেশের সঙ্গে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছি। যা আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হতে চলছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সতর্ক থাকব। করোনার নতুন স্ট্রেইন 'ওমিক্রন' নিয়ে যেহেতু এখনো বিস্তর তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই এর ঝুঁকি কতটুকু তা এখনো অজানা। ডবিস্নউএইচও প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি অন্যান্য অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য ভ্যারিয়েন্টের মতো ঝুঁকি রয়েছে। আর বর্তমানে বাজারে যে করোনার প্রতিষেধক টিকা রয়েছে এর বিরুদ্ধে কম কার্যকর কিনা তা জানতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির প্রধান মারিয়া ভন কারখোভ জানান, 'ওমিক্রন, বি১.১.৫২৯-কে উদ্বেগের ভ্যারিয়েন্ট বলা হচ্ছে কারণ এর ভেতর দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে।' মারিয়া তার টুইটারে আরও উলেস্নখ করেন, 'এই ভ্যারিয়েন্টে অনেক মিউটেশন দেখা গেছে। কিছু মিউটেশন (জিনগত পরিবর্তন) সত্যিই উদ্বেগের।' প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ৭টি দেশের সঙ্গে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশ। সাময়িকভাবে আফ্রিকার এই দেশগুলো থেকে কেউ ভ্রমণ করতে পারবে না। তবে এই সাত দেশ থেকে মার্কিন নাগরিকরা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এদিকে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তার দেশের আইনমন্ত্রীদের বলেছেন, 'যত দ্রম্নত সম্ভব এই বিষয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত'। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও রোববার (আজ) থেকে ভ্রমণে বিধিনিষেধের আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন বলেন, 'নতুন স্ট্রেইন ওমিক্রন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না পাওয়া পর্যন্ত ফ্লাইট স্থগিত করতে হবে। শনাক্ত হওয়া দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের অবশ্যই আলাদা করা উচিত। এই নিয়মগুলো কঠোরভাবে মানা উচিত'। শুক্রবার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের কথা শুনিয়ে মার্কিন শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যান্থনি ফাউচি। তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব না মিললেও চিন্তার কারণ রয়েছে। গবেষণার ফল হাতে না আসা পর্যন্ত আমরা এই মুহূর্তে সঠিকভাবে বলতে পারছি না'। বিশ্বের অনেক দেশ যখন আফ্রিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তখন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন আফ্রিকার কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার পরিচালক ডক্টর জন নেকেনগাসং। তিনি বলেন, 'আগে যেই ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার সংক্রমণ রোধে ভ্রমণসহ বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও বিস্তার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় কাজে আসেনি।' ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা এবং বার বার হাত ধোয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।