শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাফ ভাড়া :দ্বিতীয় বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি

ভর্তুকি ছাড়া হাফ পাস নয়, টাস্কফোর্স চায় বাস মালিকরা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিতে দুই দিনের আলটিমেটাম
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

সারাদেশে গণপরিবহণে হাফ পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ ও পরিবহণ মালিকরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সরকারপক্ষ পরিবহণ মালিকদের মন গলাতে না পারায় শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের দাবির বিষয়টি ঝুলেই রইল। এর আগে বৃহস্পতিবারও বৈঠকে বসেছিলেন পরিবহণ মালিক নেতারা ও বিআরটিএ কর্মকর্তারা।

শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহণে হাফ পাসের বিষয়ে পরিবহণ মালিকদের অনুরোধ করেছে সরকার। সরকারের অনুরোধ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কর্ণপাত না করে উল্টো পরিবহণ মালিকরা ভর্তুকি দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে টাস্কফোর্স গঠন করে গরিব বাস মালিকদের প্রণোদনা দেওয়ারও দাবি জানান তারা। শনিবার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিআরটিএ'র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে টানা আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন বিআরটিএসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু মালিকদের অনীহার কারণে বৈঠকে হাফ পাসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পরিবহণ নেতাদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। আসলে পরিবহণ মালিকরা সবসময় সরকারকে বেকায়দায় রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে বলে জানান তিনি।

বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারের সঙ্গে আমরাও শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে ঢাকার ৮০ শতাংশ বাস মালিক গরিব। হাফ ভাড়া নিলে তাদের ক্ষতি হবে। আমরা এসব বাস মালিককে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।

এছাড়া সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনেরও দাবি জানিয়েছি আমরা।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, '২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ এ বৈঠক হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের নতুন প্রস্তাব এসেছে।' এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবহণ নেতারা শিক্ষার্থীদের হাফ পাস দিলে তাদেরকেও কনসেশন দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কত ছাত্র, কতজন বাস ব্যবহার করে তার একটা পরিসংখ্যানও চেয়েছেন নেতারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা সেই তথ্য চেয়েছি তারা তা দেবেন। পুরো বিষয়টি আমরা সরকারকে জানাব।

এদিকে, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় দেওয়া ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার রাপা পস্নাজার সামনে বিক্ষোভরত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানিয়ে দুই দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। রোববার ও সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ৯ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তারা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে দনিয়া কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। শাহবাগে শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এর ফলে এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময় ধানমন্ডি বয়েজের শিক্ষার্থীরা ২৭ নম্বর সড়কের মুখে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে বসে পড়ে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আইডিয়াল কমার্স কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজ, দুয়ারীপাড়া মহাবিদ্যালয়, মুন্সী আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি উলেস্নখ করে স্স্নোগান দিতে থাকে। সেখানে যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেট কার, বাস এবং মোটর সাইকেল চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করেও দেখে শিক্ষার্থীরা। ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তারা। আন্দোলনে প্রতিদিন সড়কে ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন যাচাই করবে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে সেগুলো হচ্ছে- নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। বৈধ-অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে। বিআরটিএ'র সব কার্যক্রমে নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ সুনিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহণে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে বিআরটিসি বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালুর বিষয়ে বাস মালিকদের রাজি করাতে পারেনি সরকার। শুরু থেকেই বাস মালিকরা ভর্তুকি ছাড়া শিক্ষার্থীদের হাফ পাসে বাস না চালানোরও হুমকি দিয়ে আসছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে