বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
গাজীপুরে জোড়া খুন

সহকর্মীর বিচ্ছেদই কাল হলো মা-মেয়ের

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

গাজীপুরে সহকর্মীর বিচ্ছেদের নেপথ্যে জড়িত সন্দেহে অপর ইন্সু্যরেন্স কর্মী ফেরদৌসী বেগম (৩০) ও তার পাঁচ বছরের মেয়ে তাসমীয়া বেগম খুন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জোড়া খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলো- সহকর্মী লিমা আক্তারের স্বামী ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া এলাকার মনির হোসেনের ছেলে মো. মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫) এবং একই এলাকার সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান।

শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রেজোয়ান আহম্মেদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান জানান, গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন ভিক্টিম ফেরদৌসি বেগম। তার বাবা ও স্বামীর নাম যথাক্রমে বাছির উদ্দিন ব্যাপারী ও রবিউল ইসলাম। ফেরদৌসীর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নরুন বাজার এলাকায়। ফেরদৌসী হাড়িনাল থেকে গাজীপুরের

\হচান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় গার্ডিয়ান ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বাবুর সংসারের অভাব ঘুচাতে বাবুর স্ত্রী লিমাকে ওই ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ফেরদৌসী। এতে স্বামীর মত ছিল না। স্ত্রীর চাকরি করা নিয়ে লিমা-বাবু দম্পতির মধ্যে মাঝে-মধ্যেই কলহ হতো।

তিনি আরও বলেন, লিমাকে ওই চাকরি থেকে বাদ দিতে বাবু ফেরদৌসীর কাছে বিভিন্ন সময় অনুরোধও করেছে। কিন্তু লিমা চাকরি ছাড়তে রাজি হয়নি। এসব কারণে তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী বাবুকে ডিভোর্স দেন। তাদের ছাড়াছাড়ির পেছনে ফেরদৌসীর হাত রয়েছে বলে বাবুর সন্দেহ হয়। এরপর থেকে প্রতিশোধ নিতে বাবু তার স্ত্রীর সহকর্মী ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর বিকেলে জাহিদুল ইসলাম খান ইন্সু্যরেন্সের বিষয়ে কথা আছে বলে ফেরদৌসীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। জাহিদুলের ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরদৌসী তার মেয়ে তাসমীয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। পরে জাহিদুল, ফেরদৌসী ও তার মেয়েকে নিয়ে রিকশাযোগে হাড়িনালের বাসা থেকে গাজীপুর মহানগরের দেশিপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় নিয়ে যায়। রিকশা থেকে নেমে কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেওয়া বাবু এবং সঙ্গে থাকা জাহিদুল গলায় ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ফেরদৌসীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনা দেখে ফেলায় তার মেয়ে তাসমিয়া চিৎকার করলে জাহিদুল তাকেও গলাকেটে হত্যা করে এবং লাশ ফেলে রেখে ঘাতকরা দ্রম্নত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

২৫ নভেম্বর এ ব্যাপারে নিহতের ভাই হযরত আলী বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শুক্রবার রাতে ওই দুইজনকে কালীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিকভাবে ওই খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শনিবার তাদের দেওয়া তথ্যমতে গ্রামের বাড়ি সালদিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে খুনে ব্যবহৃত দুটি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে