শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাইজুলে দিশেহারা পাকিস্তান ধুঁকছে টাইগাররাও

ম আমিনুল ইসলাম লিটন
  ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:১৭
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে এলবিডবিস্নউর জোরালো আবেদন করছেন লিটন দাস-ইয়াসির আলীরা। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট তুলে নেন তাইজুল -বিসিবি

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে শেষ উইকেটে ফাহিম আশরাফ-শাহীন আফ্রিদি ভুগিয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় দিনের দুই সেশনেই রাজত্ব করেছে বাংলাদেশি বোলাররা। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণির কাছে যেন অসহায় ছিল সফরকারীরা। তাইজুলের ঘূর্ণিতে বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যান ফিরেছেন সাজঘরে। টাইগার বোলার একাই নিয়েছেন সাত উইকেট। শীতের দুপুরে রোমাঞ্চকর বোলিং উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

শনিবার দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে ছয় উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। এদিনই ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই ১৪৬ রান তুলে নেওয়া দুই পাকিস্তানি ওপেনার আবিদ আলী ও আবদুলস্নাহ শফিকের ব্যাটে টাইগারদের বিপক্ষে বড় লিড নেওয়ার পথে ছিল সফরকারীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিড তো দূরে থাক, বাংলাদেশের দেওয়া স্কোরও ছুঁতে পারেনি পাকিস্তান। একদিনেই অলআউট হয়েছে ২৮৬ রানে। এতে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। লিড পাওয়ার পরই ব্যাটিংয়ে ধ্বসে পড়েছে মুমিনুলরা। ৩৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের লিড ৮৩ রানে। মুশফিকুর রহিম ১২ ও ইয়াসির আলী আট রানে অপরাজিত রয়েছেন।

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৭ রান করেন আবিদ আলী। এ ছাড়া ৫২ রান করেন আব্দুলস্নাহ শফিক। এই দুই ওপেনার ছাড়া পাকিস্তানের কোনো ৫

ব্যাটসম্যানের ব্যাট হাসেনি। তাইজুল একাই নেন সাত উইকেট। এবাদত দুই ও মিরাজ নেন একটি উইকেট।

আব্দুলস্নাহ শফিক, আজহার আলী হতে শুরু করে বাবর আজম; একে একে সবাই ফিরেছেন সাজঘরে। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে একাই লড়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী। অবশেষে সেই কাঁটা ভাঙল তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে। তাইজুলের ফুলিশ বল ব্যাট মিস করে লাগে আবিদের পায়ে। জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন আবিদ। পরে দেখা যায়, বল লেগ স্ট্যাম্প স্পর্শ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আম্পায়ার্স কল হওয়াতে শেষ পর্যন্ত সাজঘরে যেতে বাধ্য হন আবিদ। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩৩ রান। ২৮২ বলে ১২টি চার ও দুটি ছয়ে এই রান করেন আবিদ।

সাগরিকার পাড়ে একটা সময় বাংলাদেশের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফাহিম আশরাফ-শাহীন আফ্রিদি। দুইজন শেষ উইকেটের জুটিতে ইতোমধ্যে ৬৯ বলে ২৯ রান যোগ করেছেন। ফাহিম বোলিং অলরাউন্ডার হলেও আফ্রিদি হলেন বোলার। কিন্তু দুইজনের কাউকেই পরাস্ত করতে পারছিলেন না এবাদত-তাইজুলরা।

প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে লিড পেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ধ্বসে পড়েছে বাংলাদেশ। মাত্র ১৫ রানের মধ্যেই হারাতে হয়েছে তিন উইকেট। দিন শেষে ৩৯ রানে চার উইকেট হারিয়েছে। প্রতিপক্ষকে স্পিনে শেষ করে দিয়ে নিজেরাই এখন পাকিস্তানের পেস তোপের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছে যেন। আসলে মুখ থুবড়ে বললে ভুল বলা হবে, বরং একে একে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলের বিপদ ডেকে এনেছে।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৪ রানের মাথায় শাহিন শাহ আফ্রিদির লেগ বিফোরের জোরাল আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। যা থেকে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মাত্র এক রান করা সাদমান ইসলাম। এই অবস্থায় ক্রিজে এসে আরও সাবধানী হওয়া দরকার ছিল প্রথম ইনিংসে ভালো করতে না পারা নাজমুল হোসেন শান্তর।

কিন্তু তিনি প্রথম বলটা কোনো রকমে পার করলেও দ্বিতীয় বলেই ব্যাটের কানা লাগিয়ে স্স্নিপে ক্যাচ দেন। অথচ বলটা ছিল অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের। যে বলটি ডিফেন্স করার প্রশ্নই আসে না। এখানেই শেষ নয়। এরপর মুমিনুল এসেও করলেন একই কাজ! তিনিও নিজের প্রথম বলেই ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দেন স্স্নিপে।

যদিও সেকেন্ড স্স্নিপে সে ক্যাচ ধরার আগেই পড়ে গেলে বেঁচে যান টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। অথচ ১৪ রানেই দুই উইকেট চলে যাওয়ায় আরও দায়িত্বশীল হওয়ার দরকার ছিল তার। কিন্তু না, সে রকম কোনো দায়িত্ববোধের ছিঁটেফোঁটাও দেখা গেল না তার কাজে।

হাসান আলীর করা ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে আজহার আলীর তালুবন্দি হয়ে ফেরেন শূন্য রানেই। যাতে ১৫ রানেই তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মুশফিকের সঙ্গে মিলে চারটি ওভার কাটিয়ে দিলেও আর যেন তর সইছিল না সাইফ হাসানের। সেই আফ্রিদির তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে। তার আগে সাইফের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ১৮ রান। তিনটি বাউন্ডারির সাহায্যে এই রান করেন টাইগার ওপেনার। যার ফলে মাত্র ২৫ রানেই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে এখন ধুঁকছে বাংলাদেশ। শাহিন আফ্রিদি ছয় রানে তিন উইকেট নিয়েছেন। হাসান আলীর পকেটে এক উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ১১৫.৪ ওভার ২৮৬

\হ(আগেরদিন ১৪৫/০) (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৮, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, আফ্রিদি ১৩*; আবু জায়েদ ০/৪১, ইবাদত ২/৪৭, তাইজুল ৭/১১৬, মিরাজ ১/৬৮, মুমিনুল ০/১২)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৩৯/৪ (সাদমান ১, সাইফ ১৮, নাজমুল ০, মুমিনুল ০, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*; আফ্রিদি ৩/৬, হাসান ১/১৯)। বাংলাদেশের লিড ৮৩ রানে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে