খালেদা জিয়া এখনো বিএনপির ট্রাম্পকার্ড

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৮:০৩

হাসান মোল্লা

২০১৮ সালে আদালতের রায়ে সাজা হওয়ার পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। নির্বাচনী নেতৃত্বেও ছিলেন না তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দল পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমান। এ সময় আন্দোলনেও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। এরই মধ্যে রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর সঙ্গে লড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে নিজ দলের চাপের পাশাপাশি অন্য অনেক রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক মহলেরও সমর্থন পাচ্ছেন। এ বিষয়কে ঘিরে নতুন করে দল চাঙা হতে শুরু করেছে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় সহজ হবে- এমনই ভাবনা দলের নেতাকর্মীদের। সব মিলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রাজনীতির বাইরে থাকা খালেদা জিয়াকে এখনো বিএনপির ট্রাম্পকার্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী বছরের শুরুতে আবারও সুংসগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। কিন্তু দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এরই মধ্যে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার ছক তৈরি করা হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর খালেদা জিয়াই বিএনপির প্রাণভোমরা। তার অনুপস্থিতির কারণে গত প্রায় তিন বছরে দল সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে আছে। জাতীয় নির্বাচনে পর্যন্ত নেতা ধার করতে হয়েছে। দলের মধ্যেও এক ধরনের সমন্বয়হীনতা কাজ করেছে।

কিন্তু খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থায় দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। প্রিয় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় থাকারাও সক্রিয় হয়েছেন। নিরীহ গোছের কর্মসূচিতে যেমন সবাই আসছে, তেমনি কঠোর কর্মসূচিতে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নিয়েছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো নিয়ে যে অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে নিজ দলের সমর্থকদের পাশাপাশি সর্বস্তরের সহানুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে আছে যে, তাকে বিদেশে পাঠানো হোক বা না হোক উভয় দিক থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বিএনপি। তবে দলের প্রাণভোমরাকে কেউ হারাতে চায় না। এ জন্য সবাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর প্রভাব বিএনপির প্রধান দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ওপরও পড়বে।

বিএনপি সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার কারণে বিএনপির ঐক্য আরও সুদৃঢ় হয়েছে। দলের মধ্যে কোন্দল বা প্রতিযোগিতাকে এখন অনেকে মুখ্য হিসেবে আর ভাবছে না। প্রথমে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সবার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমান এই অবস্থাকে কাজে লাগাতে চায় দলের নীতি-নির্ধারকরা। তারা এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন। নিরীহ গোছের চলমান আন্দোলন কীভাবে কঠোর থেকে কঠোরতর করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন। দোয়া-সমাবেশের ৮ দিনের চলমান কর্মসূচিতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে নতুন কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা জানানো হচ্ছে। সেসব স্থান থেকে ইতিবাচক সাড়াও মিলছে।

বিএনপি সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার বিদেশে পাঠানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন আর থামাবে না বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় প্রধান দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায় করার টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এ জন্য দলীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থন আদায়ের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে দলের কূটনীতিক উইংও এ ক্ষেত্রে কাজ করছে।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে চলমান আন্দোলন যে ধারাবাহিকভাবে বিএনপি চালিয়ে যেতে চায়, এর আভাস মেলে সাম্প্রতিক সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যে। কঠোর আন্দোলনের ডাকের জন্য নেতাকর্মীদের চোখ-কান খোলা রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সবাই যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ইশারা-ইঙ্গিতে যেভাবে ডাক আসুক, সেই ডাকে শামিল হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি, চিকিৎসা এবং গণতন্ত্র মুক্ত করতে হবে। এই দুইটি ফলাফল একই সঙ্গে অর্জন করতে হবে। গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে গতিশীল ও তীব্র থেকে তীব্র করা হবে। যখন আঘাত করা দরকার তখন আঘাতের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন করতে হবে।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে এতদিন সর্বোচ্চ নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও এখন কিছুটা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে পরিবারও। ইতোপূর্বে বিদেশে চিকিৎসা প্রশ্নে পরিবারের অনেক শর্তে মনে নেওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের বিষয়ে ঘোর আপত্তির কথা এরই মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, 'খালেদা জিয়া জলে পড়ে যাননি যে তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মারা যাবে, তবুও রাষ্ট্রপতির কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করব না।'

এদিকে চলমান কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিবও। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির সামনে একটাই পথ, তা হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলনকে তীব্র করে আরও বেগবান করতে হবে। খালেদা জিয়াকে দ্রম্নত মুক্তি না দিলে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দেওয়া হবে।