ওমিক্রন :প্রস্তুতি কতদূর?

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৯:১৬

সাখাওয়াত হোসেন

করোনার ভয়ংকর নতুন ভ্যারিয়েন্ট 'ওমিক্রনের' সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সর্বোচ্চ সতর্ক হয়ে উঠেছে। অনেক দেশ এ ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। কোনো কোনো দেশে সেখান থেকে আসা নাগরিকদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে একটি দেশ বিদেশিদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে নতুন করে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমান ও স্থল বন্দরসহ দেশের সব এন্ট্রি পয়েন্টে আরটিপিসিআর টেস্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন জোরদার করেছে।

 

এদিকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে দেশের সব প্রবশপথে রোববার সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও 'অ্যাকশন পস্ন্যান' দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জোরালো তাগিদ দিলেও তা কবে নাগাদ কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে তারা নিজেরাই সংশয়ে রয়েছেন। এ কমিটির একাধিক সদস্য জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বিগত সময়ও তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও তার অধিকাংশ সময়মতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিছু পদক্ষেপ আংশিক গ্রহণ করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিগত সময়ের মতো এবার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে বিলম্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নেবে। যা সামাল দেওয়া দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।

এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগাম সতর্কতার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে ধীরগতির কথা জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা অস্বীকার করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম রোববার অনলাইন বুলেটিনে বলেন, 'নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।' তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া

একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেই বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

তবে রোববার দেশের বেশ কয়েকটি সীমান্তের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন নিউজের মাধ্যমে তারা এ ব্যাপারে অবগত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কোনো গাইড লাইন তারা এখনো পাননি। করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ার পর ইমিগ্রেশনে যে ধরনের শিথিলতা ছিল, এখনো সেটি রয়েছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, করোনার নতুন এই ধরনে আগের চেয়ে ভিন্ন প্রোটিন পাওয়ায় টিকা কতটা কাজ করবে তা নিয়েও শঙ্কা আছে। তাই এখনই এই ধরন নিয়ে অনুমান করা কঠিন। তাই দেশে যাতে এই ধরন আসতে না পারে সে ব্যাপারে এখনই কঠোর হতে হবে। অন্যথায় ঝুঁকি বাড়বে।

ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও মাস্ক পরা অনেকে ছেড়েই দিয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, নিরাপদে থাকতে হলে এগুলো আবার কঠোরভাবে শুরু করতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

ওমিক্রন ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি সে প্রসঙ্গে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুলস্না বলেন, অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদেরও সেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ যে পাঁচটি দেশ রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ করা এবং অন্য দেশ ঘুরে ওই দেশগুলো থেকে আসা ভিজিটরও বন্ধ করা জরুরি। এরপরও যদি কেউ এসে পড়ে, তবে তাকে বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর টেস্ট করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে দেওয়া উচিত। এবার আগের চেয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি দাবি করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেল্টার সময় একটু হলেও দেরিতে হয়েছিল। যে কারণে পরবর্তীতে তা মোকাবিলা করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের এন্ট্রি পয়েন্টে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নতুন ধরন আসার জন্য বসে থাকা উচিত হবে না বলে মনে করেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের যে সচেতনতা, তা বেশ আগেই উধাও হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ প্রবণতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিগত সময়ের মতো অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, বাজার ও গণপরিবহণসহ সব জায়গায় মাস্ক বাধ্যতামূলক করা জরুরি। তা না হলে সীমান্তে কড়াকড়ি করেও কোনো লাভ হবে না।

তবে ভয়ংকর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে সচেতনতা সামান্য বাড়েনি তা রাস্তা-ঘাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেই তা সহজে নিশ্চিত হওয়া যায়। কয়েকদিন ধরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই ওমিক্রন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে এসব আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক নেই। জনসমাগম এড়িয়ে চলার ব্যাপারেও মাথাব্যথা নেই কারও।

করোনা পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভাষ্য, নতুন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার আগে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক জনসমাগম বন্ধ করা জরুরি। এ ব্যাপারে আগেভাগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। হুট করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।