রাজধানীর ৫০ থানায় চালু হচ্ছে সাইবার বিভাগ

নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিতে পারদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:১৮

ম গাফফার খান চৌধুরী

সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে ঢাকার ৫০টি থানায় চালু হচ্ছে পৃথক সাইবার বিভাগ। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি থানায় সাইবার বিভাগ চালু করা হবে। ইতোপূর্বে সরকারের তরফ থেকে পৃথকভাবে সাইবার থানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের নানা দুর্ভোগ লাঘবে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রতিটি থানায় নতুন এই সেবা বিভাগ চালু করা হচ্ছে। যদিও দেশের প্রতিটি থানায়ই সাইবার সংক্রান্ত মামলা দায়ের ও তদন্ত কার্যক্রম চালু আছে। পৃথকভাবে চালু হওয়া সাইবার বিভাগে শুধু সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়ের করা যাবে। মামলাগুলো তদন্তসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চালাতে প্রতিটি থানায় প্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী দুজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মামলাগুলো ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনে সহায়তা নেওয়া হবে অন্যান্য সংস্থার সাইবার বিভাগেরও। সিআইডির সাইবার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুজব ছড়ানোর দায়ে এখন পর্যন্ত ১১২টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত হয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলো পরিচালিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, লিবিয়া ও সৌদি আবর থেকে। পরিচালনার সঙ্গে ৬০ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেডওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে পৃথকভাবে সাইবার থানা স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে এশাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়াদের দুর্ভোগ লাঘবে সর্বসম্মতিক্রমেই পৃথক সাইবার থানা স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ পৃথক সাইবার স্থাপন করলে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ বাড়বে। ভুক্তভোগীদের ওইসব থানায় গিয়ে মামলা করতে হবে। আর পুরো রাজধানীতে \হএমন থানা করা সম্ভব নয়। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এজন্য প্রতিটি থানায় পৃথক সাইবার বিভাগ চালু করা হচ্ছে। থানা কম্পাউন্ডে থাকা সেই সাইবার বিভাগে সাইবার সংক্রান্ত মামলাগুলো দায়ের হবে। মামলাগুলোর তদন্ত করতে প্রাথমিকভাবে দুইজন করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। যারা প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ও পারদর্শী হবেন। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার যে কোনো জায়গায় যদি একটি সাইবার থানা স্থাপন করা হয়, সেটি হবে হঠকারী সিদ্ধান্ত। কারণ অন্যান্য এলাকার ভুক্তভোগীর মামলা দায়ের করতে সেই থানায় যেতে হবে। ঢাকা যেহেতু আয়তনের দিক থেকে অনেক বড়, সেজন্য ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ বাড়বে। এ ছাড়া বাড়তি যানজট অর্থ খরচ ও সময় অপচয়সহ নানা বিষয়াদি আছে। এজন্যই সর্বসম্মতিক্রমে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে। সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধের মাত্রা যেহেতু বাড়ছে, এজন্য আমরাও মামলার তদন্ত কার্যক্রমে পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। পুলিশ মহাপরিদর্শক ডক্টর বেনজীর আহমেদ বলেছেন, গ্রাম পর্যায়েও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। যে কারণে সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধের মাত্রাও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হচ্ছে। দেশের সব থানায় সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে মামলা হচ্ছে। এসব মামলা তদন্ত দ্রম্নত করতে প্রতিটি থানায় পর্যায়ক্রমে সাইবার বিভাগ চালু করা হবে। প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। এজন্যই অনেকেই প্রযুক্তির কারণে সাইবার বুলিং বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রও এর শিকার হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত প্রায় এক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি নারী। যাদের মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি জনকে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এজন্য নারীদের জন্য 'সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিস' চালু করা হয়েছে এক বছর আগে। পুলিশ প্রধানের বরাত দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতিটি থানায় সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনায় মামলা হচ্ছে। তবে সেসব মামলা হয়তো দ্রম্নততার সঙ্গে তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি থানায় প্রযুক্তি বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে সাইবার সংক্রান্ত মামলাগুলোর তদন্ত করা সহজ হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখতে পাওয়া, ২০১৫ সালে সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৮ সালে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্যর পর সারাদেশে আট দিনের তান্ডব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট আন্দোলনের নামে যানবাহন ভাঙচুর, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ছাত্র মৃতু্যর গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ভাঙচুর, পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব এবং রাজধানীর বাড্ডায় রেনু নামের নামে এক উচ্চ শিক্ষিতা মহিলাকে পিটিয়ে হত্যার নেপথ্যেও ছিল গুজব। সবশেষ চলতি বছর সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলায় পবিত্র কোরান অবমাননা করার গুজব ছড়ানো হয়। সেই গুজবে অনেক জেলায় ব্যাপক হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক পর্যালোচনায় সব ইসু্যতে গুজবকেই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য সরকারকে সাইবার সংক্রান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র বলছে। \হ