রাজশাহীতে মিজার্ ফখরুল

সংকট আরও কঠিন আরও ভয়াবহ

মিজার্ ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নিবার্চনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশনেত্রী অসুস্থ, তবুও তাকে জেলখানায় নেয়া হয়েছে।

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর Ñযাযাদি
আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নিবার্চনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। শুক্রবার রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। মিজার্ ফখরুল উপস্থিত নেতাকমীের্দর উদ্দেশে বলেন, ‘শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন। পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এসেছেন। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে কিনা, তা প্রশ্ন হয়ে দঁাড়িয়েছে।’ মিজার্ ফখরুল অভিযোগ করেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাকে জেলখানায় নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত পঁাচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূণর্ভাবে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে বাংলাদেশের মুক্তি জন্য লড়াই করছি। সে জন্য আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, পালাের্মন্ট ভেঙে দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলিখিত বাকশাল কায়েম করতে সরকার দেশের সব সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয়করণ করেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন হবে না, হতে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনের ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতাকমীের্দর প্রস্তুত থাকার আহŸান জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নিবার্চন হতে দেয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নিবার্চনে নৌকা ভেসে যাবে। তিনি বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তার দেয়া কথা রাখেননি। কথা দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তার কথা বরখেলাপ করেছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকাযর্কর। বতর্মান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পযর্ন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকমীের্দর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহŸান জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হুদার অধীনে নিবার্চনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নিবার্চনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নিবার্সনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এ দেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নিবার্চনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।’ জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা নিবার্চনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। ৭ দফা না মানলে দেশে নিবার্চন হবে না।’ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বিএনপির সভায় আসিনি, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের সভায় এসেছি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে ঐক্যফ্রন্ট অটুট রাখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া, তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এবার আলোচনায় বসেছেন। যেদিন আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়েছে। আপনারা কি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চান। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া, তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। টাঙ্গাইল থেকে সড়কপথে এসেছি, রাস্তায় রাস্তায় বাধা এসেছে। আমাকেও ফেরাতে পারেনি। এই মাঠের মানুষদেরও পারেনি।’ এলডিপির সভাপতি কনের্ল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নিবার্চন দিন। মন্টু সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনের ব্যবস্থা করুন।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বতর্মান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না। জনসভায় আরও বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টিএম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ। এর আগে দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এ জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম কমর্সূচি হিসেবে সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ করা হয়। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে এ ধরনের একটি ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বৈঠকের পর বৈঠক, নানা হিসাব-নিকাশের পর ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসা দলগুলো অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্যে এক হয়। এই সব দাবি দাওয়া নিয়ে গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপে ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন।