একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

সাজেদার ঘরে অশান্তি আশা দেখছেন শামা

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের এক ইউনিয়ন)

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
ফরিদপুরের সালধা ও নগরকান্দা উপজেলা এবং পাশের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসন। এ আসনের বতর্মান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হলেও দুই ছেলের বিতকির্ত কমর্কাÐে তার জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বলে দাবি করছেন এখানকার ভোটাররা। এই আসনে দীঘর্ দিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে আসছে। কারণ এই আসনে প্রাথীর্ ছিলেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান ও বতর্মান সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মতো বষীর্য়ান নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সামনে রেখেও এ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। মামলা-হামলা ও অন্তঃকোন্দলে বিএনপির অবস্থা অনেকটা বেহাল। এরপরও নিবার্চন সামনে রেখে দলের বিভিন্ন কমর্সূচি নিয়ে ঘুরে দঁাড়াতে চেষ্টা করছে সংসদের বাইরে থাকা দলটি। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। আওয়ামী লীগের বষীর্য়ান নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর অসুস্থতায় এই আসনে দলের বেশ কিছু নতুন মুখ আগামী নিবার্চনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে বিভিন্ন কমর্কাÐে অংশ নিচ্ছেন। উপনেতার দুই ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু ও শাহদাব আকবর চৌধুরী লাভুর রেষারেষিতে দলের নেতাকমীর্রা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রয়েছেন। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের সমীকরণও জটিল হয়ে উঠেছে। তবে সাজেদা চৌধুরীর সমথর্করা বলছেন, দলের মনোনয়ন নিধার্রণ হয়ে গেলে আর কোনো গ্রæপিং থাকবে না। সকলেই এক হয়ে কাজ করবেন নেত্রীর পক্ষে। তারা মনে করেন, অসুস্থতাজনিত কারণে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রাথীর্ হতে না পারলে তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ হয়ে নিবার্চনে অংশ নিতে পারেন। এছাড়াও এই আসনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মেজর (অব.) আতম হালিম, মুক্তিযোদ্ধা এয়ার কমডোর (অব.) কাজী দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক ও কৃষক লীগ নেতা লায়েকুজ্জামান, নগরকান্দা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক অ্যাড. জামাল হোসেন মিয়া ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল। এদের মধ্যে জামাল হোসেন মিয়া মনোনয়ন দৌড়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন। তরুণ এই নেতা নিয়মিত এলাকায় আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের মাঝে আলোচনায় এসেছেন বলে দাবি করেন তার সমথর্করা। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মেজর (অব.) আতম হালিম। তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন দীঘির্দন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকমীের্দর নিয়ে নিয়মিত এলাকায় আসছেন, গণসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। এই আসনটিতে আরেক সামরিক কমর্কতার্ এয়ার কমডোর কাজী দেলোয়ার হোসেন মনোনয়ন চেয়ে এলাকায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে গণসংযোগ করছেন। ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বেশÑ এমনটি মনে করেন দলের নেতাকমীর্রা। এদিকে সংসদ উপনেতার এই আসনে দলের মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান। তিনি দলের কাছে ইতিপূবের্ও নৌকা প্রতীক চেয়েছেন। একাদশ সংসদ নিবার্চন সামনে রেখে তিনি নিবার্চনী এলাকায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে পথসভা, উঠান বৈঠক করছেন নিয়মিত। এছাড়াও এলাকার হাটবাজারগুলোতে নিবার্চনী গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সমান তালে। এই আসনে দলের মনোনয়ন চাইছেন জাতীয় পাটির্র সাবেক এমপি ও বতর্মান আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল। পরিবারিকভাবে তিনি সম্ভ্রান্তÍ পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্পতেই মানুষের কাছে যেতে পারছেন। তিনি নৌকা প্রতীক চেয়ে বিভিন্ন সময়ে গণসংযোগ করে চলেছেন। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে একজনের নাম সবাির্ধক আলোচিত, তিনি হলেন ফরিদপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিঙ্কু। তার পিতা বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। তিনি তার পিতার মৃত্যুর পর থেকেই বিএনপি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আগামী নিবার্চনে এ আসনে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবার অনুসারীরা রয়েছে তার পাশে। যে কারণে অন্য প্রাথীর্র চেয়ে এলাকায় তার অস্থান ভালো। বিএনপির নেতাকমীর্রা জানান, শামা ওবায়েদ ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল। তিনি ঢাকা কেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মাঝেমধ্যে এই এলাকায় এসে দলের কমর্কাÐে অংশ নেন । এ আসনে ইসলামী ঐক্যজোট, সিপিবি ও জাকের পাটির্র রাজনৈতিক কমর্কাÐ রয়েছে। সিপিবি নেতা হাফিজুর রহমান নিবার্চন করতে পারেন। এই আসনে জাকের পাটির্র ফরিদপুর জেলার সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়া দলের পক্ষ থেকে নিবার্চনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি জাকের পাটির্র পক্ষ থেকে নগরকান্দা ও সালথায় বেশ কয়েকটি পথসভা ও জনসভা করেছেন। এছাড়াও তিনি উপজেলা হাটবাজারগুলোতে গণসংযোগ করছেন নিয়িমিত। উল্লেখ্য, এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ১০৩। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লক্ষ ৪১ হাজার ২৯০ এবং পুরুষ ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮১৩।