প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
ডা. মুরাদ হাসান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। সোমবার রাতে তাকে পদত্যাগের এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে মুরাদ হাসানের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালেও তিনি একই আসনে থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের সময় মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ৫ মাসের মাথায় ওই বছরের ১৯ মে তার দপ্তর পরিবর্তন করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পেশায় চিকিৎসক ডা. মো. মুরাদ হাসান স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল টক শোতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ডা. মুরাদ। ওই বক্তব্যের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নারী অধিকার কর্মীরা তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এর আগে সোমবার সকালে বিবিসিকে ডা. মুরাদ হাসান বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে করা মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। এ সময় তিনি বলেন, এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি কোনো ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের ওপর থেকে কোনো চাপও নেই। এ সময় মুরাদ হাসান অভিযোগ করেন, তিনি বক্তব্য দেওয়ার আগে তাকে 'নোংরা ভাষায়' আক্রমণ করে কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমার মেয়ের বয়সের চেয়ে সে এক বছরের বড়। আমার কন্যার মতো বয়সি হয়ে যে নোংরা ভাষায় আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে, সেটা তো কুচিন্তনীয়। এটা আমার কাছে খুব দুঃখজনক মনে হয়েছে। তার সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ছবি আমার কাছে চলে এসেছে।' এদিকে সোমবার সকালে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার 'ব্যক্তিগত' আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য নয়। এ ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।' সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে সোমবার বিকালে ডা. মুরাদ হাসানের ছবি পুড়িয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজধানীর নয়াপল্টনে কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ছবি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিক্ষোভের আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত একটি মিছিল হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন রুহুল কবির রিজভী। একই বক্তব্যের প্রতিবাদে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। এর পাশাপাশি রোববার দিনগত রাত থেকে ডা. মুরাদ হাসানের নামে কল রেকর্ডের একটি অডিও ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ট্রিমিং পস্ন্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। ৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের অডিওতে একজন নারীর নামও এসেছে। শোনা যাচ্ছে, ওই নারী ঢাকাই সিনেমার একজন নায়িকা। তবে অডিওতে থাকা নারীকণ্ঠ ওই নায়িকার কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অডিওতে ওই পুরুষকে (যাকে মুরাদ হাসান বলা হচ্ছে) অশ্লীল নানা কথা বলতে শোনা যায়। এ কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।