আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

অসচেতনতায় বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগ

বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটিরও বেশি। যা আগামী ২০৪০ সালে ৬৪ কোটিতে পেঁৗছতে পারে। অন্যদিক বাংলাদেশে এ রোগীর সংখ্যা ৭৩ লাখেরও বেশি

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাহিদ হাসান
ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের শতকরা ৫০ জনই জানেন না যে, তারা এ রোগে আক্রান্ত। যখন আক্রান্ত রোগীর শরীরে অন্যান্য রোগ বাসা বঁাধে তখন এটি চিহ্নিত হয়। অথচ প্রাথমিক পযাের্য় এ রোগটি চিহ্নিত হলে ৮০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে রোগটি সম্পকের্ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশের মতো আজ দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০১৮। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘ডায়াবেটিস কনসানার্স এভরি ফ্যামিলি অথার্ৎ ডায়াবেটিস প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগ।’ সরেজমিন একাধিক ডায়াবেটিস চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তজাির্তক ডায়াবেটিক ফেডারেশন কতৃর্ক ‘আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস-২০১৭’ এর অষ্টম সংস্করণে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটিরও বেশি। যা আগামী ২০৪০ সালে ৬৪ কোটিতে পেঁৗছতে পারে। অন্যদিক বাংলাদেশে এ রোগীর সংখ্যা ৭৩ লাখেরও বেশি। বতর্মানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। দেশে একজন ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে গড়ে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। আর এ রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই মহিলা। অথচ আক্রান্ত নারী-পুরুষদের অধের্কই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। এছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২০ জন গভর্কালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের ৬৫ শতাংশই পরবতীের্ত ডায়াবেটিস-২ আক্রান্ত হয়। এসব মায়ের জন্ম নেয়া শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। বিষয়টি সম্পকের্ বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে এমন কোনো পরিবার নেই যে পরিবারে অন্তত একজন ডায়াবেটিস রোগী অথবা এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন এমন মানুষ নেই। তবে দেশে ৭৩ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ (৬২ শতাংশ) রোগীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি নারীদের গভর্ধারণ-পূবর্ সেবা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সারাদেশের ৪০০ কাজীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিত গভর্ধারণের বিষয়ে নব-দম্পতিকে পরামশর্ দেবেন। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঝঁুকি থেকে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন করতে বিয়ে নিবন্ধনের পর কাবিননামায় ‘সুস্থ মা-সুস্থ শিশু, সমৃদ্ধ দেশÑ সকল গভর্ধারণ হোক পরিকল্পিত’ শীষর্ক কথাটি সিলমোহরযুক্ত করার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কাজীদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সন্তান সম্ভবা মা অপুষ্টিতে ভুগলে গভের্র সন্তান ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকে। ফলে সমিতির উদ্যোগে ৩০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সারাদেশে ৫০টি গভর্ধারণ-পূবর্ সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দেশের মসজিদগুলোতে জুময়ার খুৎবায় ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ইমামদের নিদের্শ দেয়া ও মসজিদের পাশে ডায়াবেটিস কনার্র খোলার কাজ করা হচ্ছে। মোবাইল অপারেটর টেলিনরের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ডায়া৩৬০’ নামে নতুন একটি কলসেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মাধ্যমে গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা ১০৬১৪ নম্বরে ফোন করে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা জানতে পারবে। তবে নাম না প্রকাশ করার শতের্ ডায়াবেটিক সমিতির এক ঊধ্বর্তন কমর্কতার্ যায়যায়দিনকে বলেন, বতর্মানে ডায়াবেটিস রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ২০০৭ সালে জাতীয় নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু রোগ সম্পকের্ সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ৮০ শতাংশ পযর্ন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই রোগটির লক্ষণ দেখামাত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য পারিবারিকভাবে সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসকের পরামশর্ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবনের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। রোগ ধরা পড়ার পর লক্ষণগুলো পযের্বক্ষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে নানা কমর্সূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে টিএসসি পযর্ন্ত র‌্যালি শেষে ইব্রাহিম কাডির্য়াক হাসপাতালে বিনামূল্যে হৃদরোগীদের চিকিৎসা পরামশর্ দান করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে রোগী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে প্রশ্নোত্তর পবর্, একই স্থানে দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা হবে। এছাড়া বাডাস সমিতির উদ্যোগে দিনব্যাপী জাতীয় জাদুঘর, ধানমÐি রবীরন্দ্র সরোবর, এনএনএইচএন ও এইচসিডিপির বিভিন্ন কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নিণর্য় ও ১৬ নভেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সমিতির নিজস্ব প্রকাশনা কান্তি ও সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও রেডিও চিভিতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।