দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে আজীবন বহিষ্কার

আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:২৮

যাযাদি রিপোটর্
শেখ হাসিনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নিবার্চনে নৌকার প্রাথীের্ক বিজয়ী করার আহŸান জানান। বুধবার গণভবনে ৪ হাজারেরও বেশি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন । গণভবনে সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া কয়েকজন নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, মূলত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নিবার্চনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে জয়ী করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বিগত সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কমর্কাÐ নিয়ে আলোচনা করেছেন। পঁচাত্তর-পরবতীর্ নিযার্তনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দলকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবার সঙ্গে আলাদাভাবে বসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এত সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললে এক মাসেরও বেশি সময় লাগবে। যারা মনোনয়ন চেয়েছেন সবাইকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হবে না। দিতে হবে একজনকে। এ সময় দলীয়প্রধান জানতে চান, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন কিনা। পরে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হাত তুলে সম্মতি জানান। এরপর শেখ হাসিনা বলেন, মনোনয়ন দেয়ার পর কোনো প্রাথীর্র বিষয়ে কথা থাকলে তা পরে শুনবেন। এখন এসব শোনার চেয়ে দলকে বিজয়ী করতে মনোযোগী হতে হবে। ঐক্যফ্রন্টসহ সব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি একাট্টা হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এ সময় তিনি কিছুদিন আগের সংলাপ ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও মূলত এটি ছিল দিকনিদের্শনামূলক সভা। যেখানে আগামী নিবার্চনসহ দলীয় কমর্কাÐ পরিচালনার ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়া শুধু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। অন্য সবাই শুনেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দিকে ফেরানো একটি টেবিল সামনে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বসেছেন। দলের সিনিয়র নেতাসহ অন্য সবাই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাতারে ছিলেন। সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া সভাটি শেষ হয় দুপুর ২টার দিকে। সভা শেষে গণভবন থেকে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে দুপুরের খাবারে আপ্যায়ন করা হয়। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। প্রায় ৪ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রিতে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে দলীয় ফান্ড সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে সারাদেশে দল যে নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগছে তা এর মাধ্যমে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, যেসব আসনে মনোনয়নপত্র বেশি কেনা হয়েছে সেখানে নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা পাটিের্ক অগার্নাইজ করতে পারেনি। এটা তাদের নেতৃত্বশূন্যতার প্রমাণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষমতায় এলে অনেক পদ ক্রিয়েট করা হবে, সেখানে সবাইকে একমোডেট করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতীয় ও আন্তজাির্তকভাবে জরিপ চালিয়েছেন। এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। কোন প্রাথীর্র প্রতি ভোটারদের সমথর্ন আছে, সেটা বিবেচনায় নেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সেখানে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে বিপদ হবে। ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে আসন খাওয়া-খাওয়ির মনোভাব তা পরিহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নিবার্চনগুলোতে দলের যারা ইতোমধ্যে নিবাির্চত হয়ে আছেন তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে না। গত দুই নিবার্চনে ক্ষমতায় এনেছি, এবারও আমিই ক্ষমতায় আনবÑ এটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রাথীর্র নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তীতিক্ষা থাকতে হবে। জনসম্পৃক্ত হতে হবে।’ আওয়ামী লীগের বতর্মান সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমথর্ন আছে, কমীর্ আছে, ভোট আছে কিন্তু ইদানীং দৃশ্যমান কমীর্ নেই। ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে এসে দলকে সংগঠিত করেছি। তিলে তিলে এই দলকে গড়ে তুলেছি। আমি, রেহানা, জয়, পুতুলসহ আমার পরিবারের সদস্যরা অনেক অসহায় সময় পার করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। এখনো নিবার্চন নিয়ে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।’ গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদান কাযর্ক্রম। সোমবার রাতে শেষ হয়। চারদিনে মোট ৪ হাজার ২৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। এরপর বুধবার (গতকাল) ধানমÐির দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া নেতাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা জানানো হয়। এ উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই কাযার্লয়ের আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ধানমÐির বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। গণমাধ্যম কমীর্রাও বুধবার সকাল থেকেই সেখানে অবস্থান নেন। কিন্তু পরে দলের দপ্তর থেকে গণভবনে সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা জানানো হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রাথীর্র সংখ্যা বেশি হওয়ায় সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটি গণভবনে স্থানান্তর করা হয়।