প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ

বিএনপি আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ যখন উৎসবমুখর হয় তখন বিএনপির খুব খারাপ লাগে। তারা সেই উৎসবে পানি ঢেলে দেয়। সেটাই নয়াপল্টনে আমরা দেখলাম।’

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিডি নিউজ
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সামনে রেখে ‘আগুন সন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে’ মন্তব্য করে বিএনপিকে হুশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি তাদের বলব, নিবার্চনে যেহেতু আসবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিবার্চনটা যেন সুষ্ঠভাবে হয় সেটাই চেষ্টা করা। অন্তত নিবার্চন বানচালের চেষ্টা যেন তারা না করে।’ বৃহস্পতিবার ধানমÐিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোডের্র সভার সূচনা বক্তব্যে ‘সাজাপ্রাপ্ত ও খুনিদের’ সঙ্গে ঐক্য করা নেতাদেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। ভোটের তোড়জোড়ের মধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কাযার্লয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকমীের্দর সংঘষের্র পরদিন শেখ হাসিনার এ প্রতিক্রিয়া এল। নিবার্চন সামনে রেখে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কাযর্ক্রমের মধ্যেই বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কাযার্লয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘষের্ জড়ায় দলটির নেতাকমীর্রা। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওই সংঘষের্ পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অধর্শতাধিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই চেষ্টা তারা ২০১৪ তে করেছে, সফল হতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। কারণ জনগণ আমাদের সাথে আছে। জনগণ চায়, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নিবার্চন হোক। যে নিবার্চনে তারা ভোট দিয়ে তাদের মন মতো সরকার গঠন করবে।’ সরকারপ্রধান বলেন, নিবার্চনে সব দল আসার ঘোষণায় দেশে যখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখনই নয়াপল্টনের ওই ঘটনা ঘটল। ‘জনগণ যখন উৎসবমুখর হয় তখন তো বিএনপির খুব খারাপ লাগে। তারা সেই উৎসবে পানি ঢালে। সেটাই কালকে আমরা দেখলাম।’ কোনো কথা নেই বাতার্ নেই। সেখানে বিএনপির এক নেতা তার মিছিল নিয়ে এল। যেটা মিছিল নিয়ে আসার কথা না। তারপরও নিয়ে এসে সেখানে মারপিট অনেকগুলো পুলিশ আহত। তিনটা গাড়িও পোড়াল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, আবার ঠিক সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করল। মানে অগ্নিসন্ত্রাস ছাড়া, মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ানো ছাড়া বিএনপি কোনো কাজ করতে পারে না- এটাই প্রমাণ।’ দশম সংসদ নিবার্চন বজের্নর ঘোষণা দিয়ে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নিবার্চন প্রতিহত করতে আন্দোলনে নামে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ভোটের বষর্পূতিের্ত ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস তাদের টানা হরতাল-অবরোধ চলে। ওই আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পেট্রলবোমা হামলায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে, আহত হন আরও অনেকে। শত শত যানবাহন পোড়ানো হয়, বিভিন্ন স্থাপনারও ক্ষয়ক্ষতি হয়। নয়াপল্টনের ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের কাজ করার পর উদোর পিÐি বুধোর ঘাড়ে দেয়া, মানে একজনের দোষ আরেকজনের ওপর দেয়া- এই কাজে তারা পারদশীর্। ‘যেখানে একেবারে ভিডিও ফুটেজসহ দেখাচ্ছে, সেখানে একেবারে চট করে বলে ফেলল (অগ্নিসংযোগকারীরা) আমাদের ছাত্রলীগের...। ছাত্রলীগ, যুবলীগ বিএনপির অফিসের সামনে যাবে কেন? আর চেহারা তো দেখাই যাচ্ছে। সবই তো বিএনপির গুÐারা এবং সন্ত্রাসী বা জামায়াতের গুÐা সন্ত্রাসীরা।’ সংঘষের্র সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশকে মারা এটা তো আমরা ২০১৪ সালেও দেখলাম, ১৫ সালেও দেখলাম। আবার গতকালও। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা খুব সহনশীলতা দেখিয়েছে। দুইটা গাড়ি সম্পূণর্ পুড়ে ভস্মীভূত, একটা আংশিক। ‘এভাবে মানুষের জানমাল নষ্ট করা এবং যখন মানুষের একটা আনন্দ উৎসব, সেই সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটানো অত্যন্ত দুঃখজনক, আমি নিন্দা জানাই।’ আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোডের্র সভায় ‘একসময় বড় বড়’ কথা বলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদের নিয়ে তারা দল করে। তাদের (বিএনপি) দলের গঠনতন্ত্রের সাত অনুচ্ছেদও এখন তারা অস্বীকার করে। যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত, খুনি, ডাকাত, দুনীির্তবাজ সবাই তাদের নেতা হতে পারে। আর এদের সাথে যারা এখন যুক্ত হয়েছে, তারা বড় বড় কথা বলে এখন দেখা যাচ্ছে তারা এই দলের সাথেই যুক্ত।’ নিবার্চন সামনে রেখে সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট গঠন করেছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক নেতা কামাল হোসেন। ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নিবার্চন করারও ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের এগিয়ে যাওয়াটা তারা নস্যাৎ করতে চায়। সাধারণ মানুষ যখন সুখে থাকে, বিএনপির মনে তখন দুঃখ দেখা দেয়। নইলে এতিমের অথর্ আত্মসাত করতে পারে না। এতিমের অথর্ আত্মসাত করেই কারাগারে তাদের নেত্রী। আরেক জনতো গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিং নানান অপকমর্, তার জন্য সাজাপ্রাপ্ত।’ তারপরও নিবার্চনে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপিকে সাধুবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে জনগণকে তিনি সতকর্ থাকার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাও ভালো। আমি চাই নিবার্চনটা হোক। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশটা থাক।’ দেশবাসীকে আমি অনুরোধ জানাব, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কমর্কাÐ তাদেরকে রুখে দঁাড়াতে হবে। ভোটের, গণতন্ত্রের ও সাংবাবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। সেজন্য আমরা জনগণের পাশে আছি এবং সবসময় আমরা পাশে থাকব।’ শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তাতে আগামী নিবার্চনেও জনগণের ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিবাির্চত করবে বলে তার বিশ্বাস। ‘নিবার্চনে জনগণ নৌকা মাকার্য় ভোট দিয়ে তাদের জীবনমান, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে, সে বিশ্বাস আমার আছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ব।’ এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছে প্রায় চার হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী। এতজনের মধ্যে থেকে ‘বাছাই করাও কঠিন কাজ’ বলে মন্তব্য করেন দলীয় প্রধান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোডের্র সভা শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৩টায়। বোডের্র সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দীন, রশিদুল আলম, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন।