বাংলাদেশের ভোট নিয়ে ভারত কেন এবার নিস্পৃহ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতকির্ত নিবার্চনকে যে দেশটি আগাগোড়া জোরালো সমথর্ন জানিয়ে এসেছিল, সেটি ছিল ভারত। ওই নিবার্চনকে সফল করার লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব নিবার্চনের ঠিক আগে ঢাকা সফর পযর্ন্ত করেছিলেন। কিন্তু পযের্বক্ষকরা মনে করছেন, পঁাচ বছর বাদে বাংলাদেশে পরবতীর্ নিবার্চনকে ঘিরে ভারত কিন্তু এবার অনেকটাই নিস্পৃহ - এই নিবার্চনের প্রাক্কালে ভারতের দিক থেকে তেমন কোনো সক্রিয়তাই চোখে পড়ছে না। কিন্তু কেন ভারত এ ধরনের অবস্থান নিচ্ছে, বাংলাদেশে এবারের ভোটটাকেইবা তারা কী চোখে দেখছে? আসলে বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নিবার্চনের সময় ভারতের দিক থেকে যে ধরনের অতি-সক্রিয়তা ছিল, পঁাচ বছর বাদে এবার তার কিন্তু ছিটেফেঁাটাও নেই। এ বছরেই নিবার্চন হয়েছে নেপাল বা মালদ্বীপেও, সেখানেও ভারতের দৃশ্যমান কোনো ভ‚মিকা চোখে পড়েনি। দিল্লিতে ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের সিনিয়র ফেলো স্ম্রুতি পট্টনায়ক মনে করছেন, খুব সচেতনভাবেই ভারত এবার বাংলাদেশের নিবার্চন থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। ড. পট্টনায়কের কথায়, ‘২০১৪-তে ভারত যেভাবে পররাষ্ট্র সচিবকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল সেই অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব সুখকর হয়নি। সেটাকে অনেকেই ভারতের হস্তক্ষপ হিসেবে দেখেছিলেন - যদিও ভারতের আসল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটা সাংবিধানিক বিপযর্য় এড়ানো।’ ‘কিন্তু এখন বাংলাদেশের রাজনীতি যে ধরনের পরিবতের্নর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে ভারতের উদাসীন থাকাটাই উচিত, আর তারাও ঠিক সেটাই করছে। ভুললে চলবে না, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পকর্ও এর মাঝে অনেক পরিণত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।’ বাংলাদেশে বিগত নিবার্চনে বিএনপি জোট অংশ নিতে রাজি হয়নি বলেই সেই নিবার্চনকে ঘিরে অত প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এবার নিবার্চন অনেকটাই অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে, ফলে ভারতেরও অত মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই, বিবিসিকে বলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবতীর্। তার কথায়, ‘বড় পরিবতর্ন বাংলাদেশে যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হলো ভারতে যেটাকে আমরা ‘মহাগঠবন্ধন’ বলি, সেই ধঁাচে ওখানেও বিরোধীদের ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছে।’ ‘এখন তো আবার যুক্তফ্রন্টও চলে এসেছে। ফলে নিবার্চন সঠিক পথেই আছে মনে হচ্ছে - আর এভাবে যদি সব এগোয় তাহলে তো ২০১৪র তুলনায় সেটা সম্পূণর্ আলাদা!’ ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা তো এখন স্বাভাবিক পথেই আছে মনে হচ্ছে। সব দলও নিবার্চনে যোগ দিতে চাইছে, যেমনটা স্বাভাবিক নিবার্চনী প্রক্রিয়ায় হয় আর কী। কাজেই মনে তো হয় না এই নিবার্চনকে সমালোচনা করার কোনো সুযোগ আছে বলে!’ বাংলাদেশে ভারতের আর এক প্রাক্তন হাইকমিশনার ভিনা সিক্রিও মনে করেন, ‘যদিও এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়Ñ তারপরও বিএনপির নিবার্চনে যোগদান খুবই ইতিবাচক ব্যাপার।’ ‘তারা যেভাবে জোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে - যেমনটা স্বাভাবিক নিবার্চনী প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে - সেটা অবশ্যই দারুণ বিষয়।’ ‘ভারত এখানে কী করল, বা কী করল না ম্যাগনিফাইং গøাস দিয়ে তা খেঁাজার কোনো দরকারই নেই’Ñ পরিষ্কার মত তার। বাংলাদেশে এবারের নিবার্চনী পরিবেশে এখন পযর্ন্ত ভারত-বিরোধিতার কোনো আবহ তেমন নেই, দিল্লির দৃষ্টিতে সেটাও অত্যন্ত ইতিবাচক একটা পদক্ষেপ। ফলে আগ বাড়িয়ে সে দেশের নিবার্চন নিয়ে অতি-সক্রিয়তা দেখিয়ে ওই পরিবেশ বিগড়ে দেয়াও কোনও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এটাও হয়তো ভারত মাথায় রাখছে। পিনাকরঞ্জন চক্রবতীর্র কথায়, ‘আমি তো বলব এটা পারস্পরিক সম্পকের্র একটা ম্যাচিউরিটি, যেখানে অন্য দেশকে নিজের নিবার্চনে ডোমেস্টিক ইস্যু বানানোর কোনো দরকার পড়ে না।’ ‘হ্যঁা, দুদেশের মধ্যেকার অভাব-অভিযোগ বা অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে অবশ্যই দুদেশের সরকারকেই ডিল করতে হবে। সেটা কিছুটা হয়নি, কিছুটা আবার হয়েছেও।’ ‘যেমন স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছে, সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়েছে। প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, আধুনিকীকরণের কাজও হচ্ছে। তো এগুলো তো একটা সুফল দেবেই!’, বলছিলেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক সম্পকের্ এই পরিণতি আর ভোটে বিএনপির যোগদান, এই দুটো ফ্যাক্টরই আসলে পঁাচ বছর আগের তুলনায় ভারতের অবস্থানকে আজ পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠানো তো দূরস্থান, বাংলাদেশের এবারের নিবার্চন নিয়ে তাই এখনও কোনো বিবৃতি দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি ভারত। বিবিসি বাংলা