কর্মসূচি স্থগিত ইসু্যতে বিএনপিতে মতানৈক্য
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:২৫
সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখা না-রাখার প্রশ্নে বিএনপিতে মতানৈক্য আছে। দলের বড় অংশের নেতাকর্মীরা চান এই ইসু্যতে আন্দোলন শুধু অব্যাহত রাখাই নয়, আরও কঠোর করতে। আর অনেক নেতা মহমারির বিষয়টি স্পর্শকাতর বিবেচনায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানার পক্ষে। তবে বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা হুট করে কোনো সিদ্ধান্তে না যাওয়ার পক্ষে থাকায় সরকারি বিধিনিষেধ মেনে জেলা পর্যায়ে বিএনপির সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। আলাপকালে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, গত এক দশকের কর্মসূচি ও চলমান কর্মসূচির মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা আছে। রাজনৈতিক কূটনীতি বা যেকোনো কারণেই হোক আগের অবস্থান থেকে সরকারের 'সামান্য উত্তরণ' ঘটেছে, 'কর্মসূচি পালনের কিছুটা সুযোগ' দিচ্ছে গত বছরের শেষ দিক থেকে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে 'ধীরে ধীরে চাঙ্গাভাব' ফিরে আসছে। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও 'দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে' আয়োজিত কর্মসূচি ও সমাবেশে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তারা উপস্থিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও থাকছেন কর্মসূচিগুলোতে। দলের এই চাঙ্গাভাব অব্যাহত রাখতে সরকারি চলমান নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক নেতাকর্মী হাইকমান্ডকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য চাপ দিয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভাবাও হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দফা যথার্থ পরিকল্পনার অভাবে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার বিষয় বিবেচনা করে আর হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না দলের নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য সময় নিয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশ হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটি বুধবার রাতে সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সংবাদ সম্মেলনে দলের সিদ্ধান্ত জানাবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। নিষেধাজ্ঞার কারণে নওগাঁ বিএনপির সমাবেশও স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমাদের কর্মসূচি এখনো যেটা চলমান রয়েছে। এরপরে যদি কিছু হয় আমাদের সিনিয়র নেতারা কথা বলে আপনাদের জানাবেন, আবারও নেতারা বসে আপনাদের জানাবেন।' অন্যদিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় করোনাক্রান্ত বিএনপি মহাসচিব ও তার সহধর্মিণীর রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে সরকার যে বিধিনিষেধ জারি করেছে সেটি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। বিএনপির চলমান আন্দোলন অনেক ঊর্ধ্বমুখী। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মানুষ রাস্তায় নামছে। ঠিক এই মুহূর্তে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সব কিছু চলবে, শুধু চলবে না রাজনৈতিক সমাবেশ।' প্রসঙ্গত, ওমিক্রনের দাপটে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে ১১ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। এই বিধিনিষেধে উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থাকবে বন্ধ। আর বুধবার থেকে দ্বিতীয় ধাপের সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। প্রথম দিন ছয় জেলায় সমাবেশ হয়। ৫ ধাপে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০ জেলায় সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবারও গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলেছে, চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর বিধিনিষেধ 'অগ্রহণযোগ্য'। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ঘরোয়া সুবিধা বহাল রেখে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সরকারি 'অপপ্রয়াস'।