শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ

ইসি গঠনে আ'লীগের চার প্রস্তাব

নির্বাচন কমিশনের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করা, কমিশন গঠনে আইন করা এবং সব ধরনের নির্বাচনে অধিকতর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে ফটোসেশনে অংশ নেন -ফোকাস বাংলা

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করা, কমিশন গঠনে আইন করা এবং সব ধরনের নির্বাচনে অধিকতর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

সোমবার বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পরে এ বিষয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ মেনে ইসি গঠনে একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সরকার এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া উত্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংবিধানিক ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে যে ব্যবস্থা নেবেন তাতে আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এর আগেও দুইবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ছিল। সেই বিষয়টিও তারা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছেন।

এ সময় সাংবাদিকেরা ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন আইনের মাধ্যমে না সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এর উত্তরে তিনি বলেন, 'আইন পাসের বিষয়ে ম্যাজিক তাস নেই। যে প্রক্রিয়ায় আইন প্রণয়ন হয় সেভাবেই হবে।' অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, অপেক্ষা করুন।'

এর আগে, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

প্রেস সচিব আরও জানান, 'আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা বলেন, "সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।" তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল নির্বাচনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা, ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্রে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোটগ্রহণে ইভিএম-এর ব্যবহার বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা।'

প্রেস সচিব বলেন, 'রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দ্রম্নত নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ইতোমধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

আওয়ামী লীগের চার প্রস্তাব : এক. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন।

দুই. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন।

তিন. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধানসাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষ্যেই মূলত এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

চার. সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ তাদের স্বাগত জানান। প্রায় ঘণ্টাখানেক সংলাপ শেষে বিকাল ৫টার পরে বঙ্গভবন থেকে বের হয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।

প্রতিনিধি দলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রম্নয়ারি। নতুন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতেই রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে