শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে করোনা রোগীর ৮০ ভাগ ডেল্টা আক্রান্ত

কর্মরত শিশুদের টিকার আওতায় আনা হবে হ সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ছাড়া বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় হ রোগী বাড়লে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

দেশে যে পরিমাণ করোনা আক্রান্ত রয়েছে তার ৮০ ভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগী বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহম্মদ খুরশীদ আলম।

দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'দুই সপ্তাহ আগেও করোনা সংক্রমণের হার ছিল দুই শতাংশের নিচে। কিন্তু বর্তমানে তা ২০ শতাংশের ওপর। এ সংক্রমণের হার বৃদ্ধির একমাত্র কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানা। আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কঠোরভাবে মানতে পারলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনার কয়েকটি ধরন বাংলাদেশে আছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই আপাতত বেশি ছড়াচ্ছে। তবে এর সঙ্গে ওমিক্রনও ছড়িয়েছে। ওমিক্রন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে। এটা হলে কিছু হবে না। এমনটা ভাবা মোটেও ঠিক নয়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশে বেশি

ছড়িয়েছে। বর্তমানে আক্রান্তদের ৮০ ভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ওমিক্রনের রোগী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি।'

স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, 'আগে ৬০ পর্যন্ত ব্যক্তিই বুস্টার ডোজ দিতে পারতেন। কিন্তু আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে ৫০ বছর এই বুস্টার ডোজের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে তো শুধু ফ্রন্টলাইনাররা ছাড়া আর কেউ ৬০ বছরের নিচে বুস্টার ডোজের টিকা নিতে পারতেন না। তা আজ থেকে ৫০ নির্ধারিত হলো।'

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ডিজি বলেন, 'যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই দুই ডোজ টিকা নেননি। হিসাব করতে গেলে তা ৮০ ভাগ। আর বাকি ২০ ভাগ টিকা নিয়েছেন কিন্তু বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। তাই তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।'

এসময় অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'আমাদের স্কুলের কোমলমতি শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া ১২-১৮ বছরের সব শিশুকেই টিকা দেওয়া হবে। এই বয়সী যারা বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ বা অন্যান্য স্থানে কাজ করে তাদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। কিছুটা সময় লাগবে। তাদের বিষয়ে একটা চিন্তা চলছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, 'কোনো হাসপাতাল বন্ধ হয়নি। প্রত্যেকটি হাসপাতাল চালু আছে। কোভিট কমে যাওয়ার কারণে আমরা সিটগুলো সাধারণ শয্যা হিসেবে ব্যবহার করছিলাম। এখন যেহেতু বাড়ছে তাই সেসব শয্যাগুলোকে কোভিডের জন্য ডেডিকেটেড করে দেব। যদি অতিরিক্ত রোগী বাড়ে তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়বে। আমাদের সক্ষমতাও জানতে হবে। হাসপাতাল, শয্যা, ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের কথাও সবাইকে ভাবতে হবে। তবে আমাদের যা ছিল তা সবই প্রস্তুত আছে।'

ডা. মীরজাদী বলেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠান স্কুল না কিন্তু বাচ্চারা পরে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এজন্য দুটি কেন্দ্র নির্দিষ্ট করা আছে। যারা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসবে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে টিকা প্রয়োগ করা হবে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।'

এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, 'এখন পর্যন্ত কতগুলো জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তা আমরা জানতে পারিনি। আর জিনোম সিকোয়েন্সিং একটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই নির্দিষ্ট বা সন্দেহভাজন রোগীদেরই জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। ওমিক্রনে কতজন এ পর্যন্ত আক্রান্ত বা কতজন মারা গেছে তাও জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে এলে আপনাদের জানানো হবে।'

অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, 'আমাদের হাতে পর্যপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন আছে। দেশের ৩০টি হাসপাতালে নতুন করে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০৮টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। অক্সিজেন কনসেটেটর আছে হাসপাতালগুলোয়। যদি অতিরিক্ত আক্রান্ত হয় তবে সবকিছুই হাতের বাইরে চলে যাবে।'

১১ দফা নির্দেশনা কার্যকর করতে হলে সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যেসব নির্দেশনা আছে সেগুলো এক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর দ্বারা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই সবার অংশগ্রহণ দরকার। লকডাউন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা পর্যবেক্ষণে আছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এন-৯৫ মাস্ক শুধু চিকিৎসকদের জন্য। যারা করোনার সিভিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আর যারা সাধারণ মানুষ তারা সার্জিক্যাল মাস্ক ও কাপড়ের মাস্ক পরতে পারেন। তবে সার্জিক্যাল মাস্ক ভালো বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে