শাহজাদপুরে হারিয়ে যাচ্ছে পানির কুয়া

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম এমএ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
পানির অপর নাম জীবন, পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষের দৈনন্দিন কাজে পানির ব্যবহার অপরিসীম। স্বচ্ছ, আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য এক সময় মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল কূপ বা কুয়া। গ্রীষ্মের খরতাপে পুকুর খাল বিল শুকিয়ে গেলে কুয়া হয়ে উঠত একমাত্র ভরসাও। তিন যুগ আগে আবহমান বাংলার প্রতিটি গ্রামে পানির জন্য কূপ বা কুয়া ছিল। মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। এ পানি দিয়ে তৃষ্ণা মিটাত, রান্না-বান্নার কাজ চালাত। কিন্তু কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো। একইভাবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে পানির কূপ। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। যান্ত্রিকতার যুগে প্রতিটি পরিবারে টিউবওয়েল হয়েছে। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে মাটির গভীর থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। একসময় গ্রাম বাংলার মা-বোনেরা সন্ধ্যা বেলায় কলসি নিয়ে কুয়া থেকে পানি আনতেন। এখন আর সে চিত্র দেখা যায় না। প্রযুক্তির এ যুগে বর্তমানে শহর অঞ্চলে এখন টিউবওয়েলও পাওয়া যায় না। তবে শাহজাদপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কিছু এলাকায় কুয়ার দেখা পাওয়া যায়। যদিও সেগুলো এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না। শাহজাদপুর উপজেলার ডায়া, নন্দলালপুর, জামিরতা, দীঘর বেলতৈল, পোরজনা, পোতাজিয়া, রাউতারা, পাড়কোলা, নরিনা এলাকায় এখনো দেখা মেলে কুয়ার ধ্বংসাবশেষ। কুয়াগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও আবার কুয়া ভরাট করে স্মৃতি চিহৃটুকু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে শাহজাদপুর উপজেলার দীঘর বেলতৈল জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা গেল বিশাল আকৃতির কুয়া। উপরে লোহার পাটাতন দিয়ে ঘেরা। স্থানীয় জাহানারা বেওয়া (৬৫) জানালেন, এই কুয়ার ভেতরে পানি আছে, কিন্তু কেউ আর পানি খাই না। আগে পুরো গ্রামের মানুষ এই কুয়ার পানি নেওয়ার জন্য সিরিয়াল ধরত। এখন সবাই টিউবওয়েল দিয়ে নিছে। ফলে অযত্ন অবহেলায় কুয়াটি হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। স্থানীয় প্রবীণ ইউপি সদস্য সোলায়মান হোসেন বলেন, কুয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। জমিদার বাড়ির এই কুয়াটি আমার জন্মের পর থেকে দেখছি। সময়ের ব্যবধানে কুয়ার পানি শুধুই স্মৃতি। তবে এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এই কুয়াটি ভেঙে ফেলা হয়নি। তাই কুয়াটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। এটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার উপযোগী করলে ঐতিহ্যটা অম্স্নান থাকবে।