গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে চলাচল করছেন যাত্রীরা

অধিকাংশ যাত্রীই সচেতন নেই মাস্ক ব্যবহার নিয়ে হ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় যাত্রী-পরিবহণকে জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

আব্দুলস্নাহ রায়হান
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা গুণিতক হারে বাড়লেও গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিতই রয়েছে। সরকারি ১১ দফা বিধিনিষেধের নির্দেশনায় গণপরিবহণে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্ত হলেও শুধু পরিবহণ মালিক সমিতির চাপের মুখে 'যত আসন তত যাত্রী'র দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। তারপরও মালিক সমিতির নির্দেশনা মানছে না রাজধানীর বাস মালিক শ্রমিকরা। 'যত আসন তত যাত্রী' নেয়ার পরও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে। গণপরিবহণ চালুর আগে এবং শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো পর জীবাণুনাশক ছিটিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা এবং যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দেওয়ার মতো নির্দেশনাগুলো একেবারেই মানা হচ্ছে না। এতে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। গণপরিবহণগুলোতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না তার প্রমাণ মিলছে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিআরটিএ ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। বুধবার রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর অভিযান চালিয়ে বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকা ও যাত্রীদের মাস্ক না পরায় বেশ কিছু যাত্রী-পরিবহণ?কে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট। সরেজমিন, বুধবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, নিউমা?র্কেট, শাহবাগ, ফার্ম?গেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- অধিকাংশ বাসেই দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো বাসের দরজায় ঝুলেও যাত্রীরা যাতায়াত কর?ছেন। রাস্তায় যেখানেই যাত্রী হাত \হউঁচু করছে, সেখানেই বাস থামিয়ে চালক যাত্রী নিচ্ছেন। সরকা?রি নির্দেশনা মোতাবেক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা যায়নি কোনো পরিবহণেই। অধিকাংশ বাসের চালক ও হেলপারের মুখে মাস্ক পর্যন্ত দেখা যায়নি। যাত্রীদের অধিকাংশই মাস্ক পরছেন না। যারা পরছেন তারাও ঠিকঠাক পরছেন না। এছাড়া. অধিকাংশ যাত্রীই এখনো সচেতন নন মাস্ক ব্যবহার নিয়ে। যাত্রীদের বেশিরভাগেরই মাস্ক পরতে অনীহা দেখা গেছে। কিছু চালককে বাসের মধ্যে ধূমপান করতেও দেখা গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধ জারির পর অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে 'যত আসন, তত যাত্রী' পরিবহণের জন্য অনু?রোধ জানিয়েছিল সমিতি। সমিতির নেতারা জানান, তা?দের অনুরো?ধের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ মৌখিকভাবে তাদেরকে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো গেজেট প্রকাশিত হয়নি। তবে মালিক সমিতি বাসের স্টাফদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিআরটিএ সূত্র বলছে, মালিক সমিতি অনুরোধ করেছিলেন বাসে তারা স্বাস্থ্যবিধি পালন করেই যাত্রী পরিবহণ করবেন। তবে অধিকাংশ বাসের স্টাফরা সেই নির্দেশনা মানছে না। এজন্য বিআরটিএ প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের জন্য জরিমানা ও মামলা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশে গত কয়েকদিনে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রাজধানীতেই ২৫ শতাংশ বেড়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাক?লে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে ?ক?রোনা রোগী?র জায়গা হবে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতর্ক করে সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, 'সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পুরো সময়েও সংক্রমণ এত দ্রম্নতগতিতে বাড়েনি যতটা ওমিক্রনের কার?ণে বর্তমা?নে বাড়ছে। মানুষ যেভা?বে বেপরোয়া চলাচল কর?ছে, এটা বাড়তেই থাকবে।' সরেজমিন আরও দেখা গেছে, মেঘলা, সময়, শিখড়, ভিআইপি, মৌ?মিতা, বিকাশ. গাজীপুর পরিবহণ, অনাবিল, মনজিল, আজমেরী, আল মক্কা, বলাকাসহ প্রায় সব বাসেই দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে। ?অধিক যাত্রী নেওয়া, স্বাস্থ্য?বিধি না মানা, স্যা?নিটাইজার ব্যবহার না করাসহ সরকা?রি নিয়ম ভাঙার কারণ হিসেবে এসব বাসের স্টাফরা যাত্রীদেরই বেশি দায়ী করছেন। অন্যদিকে যাত্রীরাও বাসের স্টাফদের দোষারোপ করছেন। মৌমিতা পরিবহণের হেল্পার হেমায়েত বলেন, 'প্রতি?টি স্ট?পে?জে বা?সের জন্য যাত্রীরা দাঁড়ি?য়ে থা?কে। এদের না নি?তে চাইলেও জোর করে বাসে উঠে যান। বাধা দিলেও শোনেন না। আমাদের কিছুই করার থাকে না।' তবে যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। সাভা?রের যাত্রী নিলম বলেন, 'গাড়িতে যাত্রী ওঠার পর ?সি?ট পরিপূর্ণ হলেও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ওরা যাত্রী তো?লে। যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা কম ব?লে অধিকাংশ সময় দাঁড়ি?য়ে যে?তে হয়। এছাড়া কিছুই করার নেই।' আরেক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, শনির আখড়ায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। সবগু?লো বাস ভ?রে আসে। তাই বাধ্য হ?য়ে বে?শিরভাগ দিন দাঁড়ি?য়ে যাই। এতটা রাস্তা দাঁড়িয়ে যে?তে কষ্ট হয়, কিন্তু কী করব? আমরা যারা যাচ্ছি, তারা অসহায়। চাইলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয় না।' বিআরটিএর উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, 'সড়কে পরিবহণ আইন ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখতে আমাদের ১০টির মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। প্রতিদিনই এসব আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন অপরাধে পরিবহণ স্টাফদের জরিমানা ও মামলা দিচ্ছে। মাস্ক না থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য বাসের স্টাফদেরও জরিমানার সম্মুখীন করা হচ্ছে।' ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস মঙ্গলবার বলেন, 'বিধিনিষেধে পরিপালনে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১০/১২ জনের নামে মামলা দিচ্ছি। জরিমানাও করা হচ্ছে অনেককে। বিভিন্ন পরিবহণের বাস থামিয়ে ৫০-৬০ জনকে নিজের টেবিলে ডেকেছি। অনেককে সতর্ক করছি। মুচলেকাও রাখছি অনেকের কাছ থেকে।' তিনি বলেন, 'নিজের জন্য, পরিবারের জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু গণপরিবহণের যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা অনেক কম। কেউ থুতনিতে নামিয়ে রাখছেন, কেউ আবার পকেটে রাখছেন। কারও কাছে মাস্ক থাকেই না। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান বাড়ানো হবে।'