করোনা সংক্রমণ রোধে প্রজ্ঞাপন

দুই সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী দুই সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এই নির্দেশনার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন, তাদের অবশ্যই টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআরে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট দেখাতে হবে। সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং শিল্প-কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা সনদ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার, শপিংমল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেল স্টেশনসহ সাধারণ লোকসমাগমের স্থানে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'সরকার বিধিনিষেধ দিলেও মানুষ সেভাবে মানছে না। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই ফের স্কুল বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা স্কুল খুলেছিলাম। কিন্তু ইদানীং লক্ষ্য করলাম স্কুল- কলেজের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে আসছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক।' তিনি আরও বলেন, দেশে নতুন করে যত করোনা আক্রান্ত বাড়ছে, তাদের ৭০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। বাকি ৩০ শতাংশ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। সংক্রমণ এভাবে বাড়লে ঢাকার শহরের সব হাসপাতালে দেখা যাবে বেড খালি নেই। এ কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উনার সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উদ্দেশ্য সংক্রমণ যেন কমে, বাচ্চারা যেন আক্রান্ত না হয়। দুই সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশে কোথাও কোনো অনুষ্ঠান হলে সেখানে কোভিড ভ্যাকসিন কার্ড নিয়ে যেতে হবে। বিয়েশাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবে না।' তিনি বলেন, 'যেখানে খেলাধুলা আছে সেখানে টিকা সনদের পাশাপাশি টেস্টের সনদও লাগবে। এগুলো বইমেলায়ও দেখাতে হবে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বইমেলা পেছানো হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতোই আমরাও চলমান পরিস্থিতির বাইরে নই।' বিধিনিষেধ সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এগুলো কার্যকরের চেষ্টা চলছে। সংক্রমণ যাতে কমে সে জন্য এই সিদ্ধান্ত। পরিবার, দেশে ও নিজের সুরক্ষার জন্য আমাদের নিয়মগুলো মানতে হবে। সরকার বিধিনিষেধ দেন, যাতে আমরা মেনে চলি।' নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চাইব, তারা যেন আরও নজরদারি বাড়ান। জনগণের দায়িত্ব আরও বেশি। নিজেদের সুরক্ষায় এটি নিজেদেরই পালন করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।' সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অফিস-আদালত অর্ধেক লোক দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই নোটিশও শিগগির দেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের। নোটিশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।' এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে গণপরিবহণে যাতে ভোগান্তি না হয়, সে জন্য অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। কয়েকটি জেলায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের উপরে, সেসব জেলায় আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'গোটা দেশের পরিস্থিতি একই রকম। আলাদাভাবে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ কার্যক্রম হবে না। যে জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি বাড়ছে, সেই সব জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।' কেন করোনা বাড়ছে- এমন প্রশ্ন রেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। যে কারণে করোনা বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা স্বাস্থ্যবিধি দেওয়া হয়েছে। সে বিধিনিষেধ যদি যথাযথ বাস্তবায়ন হয়, তাহলে কারোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো।' স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরসহ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো : এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা তো জাতীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না। সরকারের সিদ্ধান্তকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে জাতীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে আগামী ৬ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, সশরীরে সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাস চলবে। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো সীমিত পরিসরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। যথারীতি অব্যাহত থাকবে জরুরি পরিসেবাগুলো (বিদু্যৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি)। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আবাসস্থলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ ও জনসমাগম না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডক্টর শিরিন আক্তার বলেন, আমরা আগেই একাডেমিক কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। সরকারি প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। এখন যেহেতু প্রজ্ঞাপন হয়ে গেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেব। তবে অনলাইনে আমাদের ক্লাস চলবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, 'আমরা আগামীকাল (শনিবার) জরুরি সভা ডেকেছি। সেখানে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।' এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, আমরা আগে থেকেই অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে ভেবে রেখেছি। এখন যেহেতু সরকারি প্রজ্ঞাপন হয়েছে, অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেব। জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডক্টর মো. মশিউর রহমান বলেন, আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে দুই সপ্তাহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরীক্ষাসমূহও এখন বন্ধ রাখায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে।