একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

রাজশাহীতে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জে বাদশা-মিনু

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী
রাজশাহীর রাজনীতিতে জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত ফজলে হোসেন বাদশা ও মিজানুর রহমান মিনু। তাদের মধ্যে ফজলে হোসেন বাদশা বতর্মানে বাংলাদেশ ওয়াকার্সর্ পাটির্র সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য। আর মিজানুর রহমান মিনু বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সিটি মেয়র ও সদর আসনের সাবেক এমপি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ১৪-দলীয় জোটের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হন ফজলে হোসেন বাদশা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে তিনি দ্বিতীয়বার জোটের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও মহাজোটের প্রাথীর্ হিসেবে রাজশাহী সদর আসন থেকে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। যদিও এই আসনে আওয়ামী লীগের চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তবে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার মতো কোনো অবস্থান নেই। নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তারা জমা দিয়েছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। রাজশাহীতে ওয়াকার্সর্ পাটির্র সাংগঠনিক অবস্থা ভালো না থাকায় নিবার্চনে ফজলে হোসেন বাদশাকে পুরোপুরি নিভর্র করতে হবে আওয়ামী লীগের ওপর। প্রচার-প্রচারণাসহ তার নিবার্চনী কমর্কাÐ নিভর্র করবে আওয়ামী লীগ নেতাকমীের্দর। ফলে এবার আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করাই বড় চ্যালেঞ্জ তার। এরই মধ্যে গত শুক্রবার আবার ওয়াকার্সর্ পাটির্র প্রায় এক হাজার নেতাকমীর্ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হাতে ফুলের নৌকা তুলে দিয়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এতে করে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নিজ দলের কমীর্ সংকট আরও বাড়বে ফজলে হোসেন বাদশার। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নিবাির্চত হওয়ার পর ফজলে হোসেন বাদশার আওয়ামী লীগের নেতাকমীের্দর সঙ্গে তেমন সমন্বয় ছিল না। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকমীের্ক তিনি মূল্যায়ন করেননি। ফলে আওয়ামী লীগ থেকে এমপির দূরত্ব বেড়েছে। তিনি বলেন, ১৪-দলীয় জোট থেকে আবারও যদি মনোনয়ন পান, তবে ফজলে হোসেন বাদশাকে আওয়ামী লীগের নেতাকমীের্দর মাঠে নামাতে বেগ পেতে হবে। সিটি করপোরেশন নিবার্চনে যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকমীর্রা ভোটের মাঠে ঝঁাপিয়ে পড়েছিলেন, মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে সংসদ নিবার্চনে ফজলে হোসেনের সঙ্গে সেভাবে নামানো যাবে কিনা, সন্দেহ রয়েছে। এ ব্যাপারে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, গত ১০ বছরে রাজশাহীর উন্নয়নে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলোর বাস্তবায়ন কাজ চলছে। রাজশাহীর মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রয়েছে। আগামী নিবার্চনেও উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবে।’ অপরদিকে, মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহীর সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সদর আসনে একবার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু এর আগে দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও নগরের সভাপতি ছিলেন। গত সিটি করপোরেশন নিবার্চনে তার ভ‚মিকা নিয়ে দলের কেন্দ্রে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এরপরও তার এই আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে মিনুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও তার বিরুদ্ধে রাজশাহী বিএনপির একটি অংশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। যার অংশহিসেবে তার বিপক্ষে সাবেক ছাত্রনেতা ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহিদ হাসান মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিয়েছেন। মিনু মনোনয়ন পেলে রাজশাহী বিএনপির প্রবীণ নেতা কবীর হোসেনসহ শীষর্ পযাের্য়র কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত রাজশাহী-২ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তালিকায় ছিলেন শুধুমাত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তার বিরুদ্ধে কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করায় বেশ আনন্দে ছিলেন মিনু সমথর্করা। তবে তাদের সেই আনন্দে বাধ সেধেছেন ৮০’র দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা সাহিদ হাসান। শুক্রবার তিনি এ আসনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। বিএনপির দুইবারের সাবেক এমপি ও জেলার সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার ছোট ভাই সাহিদ হাসান। তার বাড়ি নগরের দরগাপাড়া এলাকায়। তিনি ছাত্রজীবনে রাজশাহী কলেজ সংসদের ভিপি ছিলেন। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি, নগর ছাত্রদলের সভাপতিও ছিলেন সাহিদ হাসান। এ ছাড়াও তিনি নগর বিএনপির মিনু-মিলন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৯০’র দশকে এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহীতে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা ছিল তার। সাহিদ হাসান বলেন, ‘দলে তার অনেক ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু বরাবরই তিনি দলে মূল্যায়নবঞ্চিত হয়েছেন। এবার তিনি দলের হাইকমান্ডের নিদেের্শ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। রাজশাহী বিএনপির একটি বড় অংশ তার সঙ্গে রয়েছেন। আশা করছেন, এবার মূল্যায়ন পাবেন। সদর আসনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে এবার এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারব।’ মিজানুর রহমান মিনু বলেন, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তার পক্ষেও রাজশাহী বিএনপির সব নেতাকমীর্ থাকবেন। নিরপেক্ষ নিবার্চন হলে তিনি বিজয়ী হবেন। মান-অভিমান থাকলেও রাজশাহী বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই।