বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বারবার প্রকল্প সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীর বিরক্তি প্রকাশ

একনেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন হ বেসরকারি খাত বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন -ফোকাস বাংলা

প্রকল্পের বারবার সংশোধনীতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ বিরক্তি প্রকাশ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভায় ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে (একনেক)।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নতুন ও ৫টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এত সংশোধিত প্রকল্প আসছে কেন? বেশিরভাগ প্রকল্পই দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প। এরকম সংশোধিত প্রকল্প যেন বারবার না আসে।

সার উৎপাদনে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের ইউরিয়া সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সার উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর গ্যাসের প্রয়োজন হয়। যার ফলে মাঝে মধ্যে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। এজন্য একনেক সভায় অনেকে বিদেশে কারখানা করে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।'

তিনি বলেন, একনেক সভায় ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ পস্ন্যান্ট স্থাপন' প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'বিদেশে সার উৎপাদন করতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারবে। বিদেশে উৎপাদিত সেই সার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাবে। উদ্যোক্তারা চাইলে বাইরের দেশেও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সংকট কমবে এবং বিদেশে বিনিয়োগও বাড়বে।' তবে দেশের স্বার্থ

যেন আগে রক্ষা হয় সেই বিষয়টি উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'হাওড় এলাকায় পিলারের সাহায্য নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এই জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।'

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওড়ে যেখানে ছোট সেতু দরকার, সেখানে তা করতে হবে। যেন ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারে। চলাচলকৃত নৌকার কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। খুঁটি দিয়ে ছোট ছোট সেতু বানিয়ে ফেলতে হবে। হাওড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। 'ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট' প্রজেক্টের (সিএসএডবিস্নউএমপি) আওতায় সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নও করা হবে।'

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কোথাও যেন পতিত জমি পড়ে না থাকে। 'আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন' প্রকল্পটি এজন্য নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে দেশের সব অঞ্চলে কৃষির পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে এরকম প্রকল্প নেওয়া হবে।

সারাদেশে পাসপোর্ট সুবিধা দেওয়া হবে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ১৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ ও ৪টি পাসপোর্ট অফিস ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। আমরা চাই দেশের মানুষ পাসপোর্টের জন্য ভালো সুবিধা যেন পান। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণকে কাছে সুবিধাজনক স্থান থেকে উন্নতমানের পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হবে।

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মাণ ও সিলেট, চট্টগ্রাম (মনসুরাবাদ), কক্সবাজার, যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে সর্বমোট ২১টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপদ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হবে বলেও উলেস্নখ করেন মন্ত্রী।

১০ প্রকল্প অনুমোদন : এদিকে, ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেন। গণভবন থেকে তিনি যুক্ত হন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্প নিয়ে ব্রিফ করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে