'চিঠি' শান্তি মিশনে প্রভাব ফেলবে না :পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের ব্যাখ্যা দিলেন তিনি

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, 'জাতিসংঘ যখন শান্তিরক্ষী নেয়, যাচাই-বাছাই করেই নেয়। সুতরাং এ নিয়ে আমরা চিন্তিত না।' মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'অনেক দিন ধরে আমাদের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান তাদের বিদেশি বন্ধু কিংবা তাদের লবিস্ট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেসব অপপ্রচারের কারণে ১২টি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানর্ যাবকে নিষিদ্ধ করার জন্য গত নভেম্বরে জাতিসংঘে একটি চিঠি দিয়েছে। জাতিসংঘ এটা নিয়ে কিছু করে নাই। চিঠি পেয়েছে, রেখে দিয়েছে। শিকার করেছে যে তারা চিঠি পেয়েছে। আমরা দেখি এটা নিয়ে কি করা যায়।' ডক্টর মোমেন বলেন, 'আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হলেই যে খুব ভালো প্রতিষ্ঠান, তা নয়। একটি প্রতিষ্ঠান বলেছে, বাংলাদেশের্ যাবে বহু লোক মেরে ফেলেছে, অমুকতমুক। তারা এক সময় বলেছিল, ইরাকে \হনিষিদ্ধ অস্ত্র রয়েছে। এটা বলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করেছে, সত্যি সত্যি আছে পরের ঘটনা আপনারা জানেন।' তিনি আরও বলেন, 'আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলব, তারা আগের কথা স্মরণ করুক। একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে তাদের ভুল পথে নিয়েছে। যার কারণে তাদের সেক্রেটারি অব স্টেট সরি বলতে হয়েছে।' র্ যাব নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করতে পারে বলে মনে করেন মোমেন। তিনি বলেন, র্'যাব অত্যন্ত পারদর্শীভাবে ও সততার সঙ্গে কাজ করছে। এজন্য বাংলাদেশে সবার কাছের্ যাব গ্রহণযোগ্য। আমাদেরও কাজ করার আছে। যদি কোথাও আইনের ব্যত্যয় হয় অবশ্যই আমরা সেখানে অ্যাকশন নেব। ইতোমধ্যে দু-একটা কেইসের্ যাবকে অ্যাবিউসড করা হয়েছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা আপনারা জানেন। এরা কিভাবে অ্যাকশন নেবে এগুলো আমেরিকানরা শিখিয়েছে। তাদের এ রুলস অব এনগেজমেন্টে যদি অসুবিধা থাকে, আমরা আমেরিকানদের বলব তোমরা এদের ফ্রেশ ট্রেইনিং দাও। যাতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটে।' বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'যারা দেশের অপপ্রচার করে তাদের অনেকে না জেনে করে। আবার অনেকে জেনে করে। প্রবাসে এত অপ্রচার কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এগুলো খুবই দুঃখজনক। দেশে বিভিন্ন দলমত থাকতে পারে। একদল আরেক দলের নীতি গ্রহণ নাও করতে পারে। কিন্তু সেজন্য দেশের ক্ষতি করার জন্য আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আগাগোড়া লেগে থাকে। এটা খুব দুঃখজনক। এগুলো করার জন্য বিদেশিদের টাকা দেয়। তাদের বলে, এ দেশে যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করে দেন।' তিনি আরও বলেন, 'এগুলো দেখে মনে হয়, তাদের দেশের প্রতি মমত্ব কম। দেশের প্রতি আন্তরিকতা না থাকায় এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়। আমি আশা করব, আগামীতে তারা অপকর্ম থেকে বিরত থাকবে,' বলেন মোমেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, 'আগামী কয়েক বছর আমাদের সামনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ আসবে। দেশে-বিদেশে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহকর্মীরা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের কল্যাণে যে নির্যাতন সহ্য করেছেন, মানুষের অধিকার আদায়ে যে সংগ্রাম করেছেন সেই সব বিষয় তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ যে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, সেটা সারা বিশ্বের সব জায়গায় পৌঁছে দেবে।' লবিস্ট নিয়োগের ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে 'মানবিক নীতি : এখানে এবং এখন প্রদর্শনীর' উদ্বোধন শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গুড গভর্ন্যান্সে ও দেশের ইতিবাচক ইমেজগুলো তুলে ধরার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন। অন্যদিকে বিএনপি দেশের ক্ষতি করার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। ডক্টর মোমেন বলেন, 'লবিস্ট নিয়োগ করা আইনবিরোধী না। কিন্তু দেখতে হবে কী কারণে লবিস্ট নিয়োগ করে, উদ্দেশ্য কী? যখন কেউ কাউকে টাকা দেয় একটা লোককে কিডন্যাপ করার জন্য, তখন কিন্তু ওই অবজেকটিভটা ঠিক নয়। কিংবা যখন দেশের ক্ষতির জন্য অনেকে পয়সা দেয়, তদবির করার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে, সেটা কিন্তু খুবই অন্যায়।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তারা দেশকে কোনো ধরনের সাহায্য করবে না। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে বিএনপি যে কয়টা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এর মূল উদ্দেশ্যটা দেশের ক্ষতি। আপনার-আমার মধ্যে ঝগড়া থাকতে পারে, কিন্তু আপনার ও আমার ঝগড়া দেশের স্বার্থে কিনা সেটা দেখতে হবে। যদি সেটা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে হয়, তা দুঃখজনক।' আওয়ামী লীগ কেন বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে তার ব্যাখ্যা দেন ডক্টর মোমেন। তবে তার ভাষায় এটাকে সরকার পিআর ফার্ম হিসেবে দেখে, লবিস্ট নয়। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ গুড গভর্ন্যান্সের জন্য এবং দেশের ইতিবাচক ইমেজগুলো তুলে ধরার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছিল যাতে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি না হয়। তখন আওয়ামী লীগ ভুল পারসেপশানটা (ধারণাটা) চেঞ্জ (পরিবর্তন) করার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে। আমরা এটাকে বলি পিআর ফার্ম, নট লবিস্ট।' বাংলাদেশে লবিস্ট নিয়োগের প্রথা সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের আমল থেকে চালু হয়েছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন বলেন, 'এগুলো অনেকদিন ধরেই আছে, নতুন নয়। এরশাদের সময় থেকেই এগুলো প্রচলিত আছে। আপনি অন্য লোককে নিয়োগ করছেন দেশের ক্ষতি করার জন্য, কাউকে মেরে ফেলার জন্য, কিডন্যাপ করার জন্য। এগুলো দেশবাসী কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।' উদ্বোধনীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, বাংলাদেশে আইসিআরসি প্রতিনিধি দলের প্রধান কাটজা লরেঞ্জ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা জাকের প্রমুখ ছিলেন।