এক ঝলকে চলমান আন্দোলন

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম শাবি প্রতিনিধি
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থী অবশেষে ১৬৩ ঘণ্টা পর তাদের 'আমরণ অনশন' ভেঙেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ডক্টর ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে তারা অনশন ভাঙেন। তবে অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ আন্দোলনের বিভিন্ন দিনের উলেস্নখযোগ্য ঘটনা একনজরে তুলে ধরা হলো: ১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজাকে কল দেন। এ সময় তিনি অসদাচরণ করেছেন এমন অভিযোগে রাত নয়টায় হলে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা পর রাত ১১টায় ভিসির বাসভবনের প্রধান ফটক ঘেরাও করেন ছাত্রীরা। সেদিন দিবাগত রাত দুটায় উপাচার্য বাসভবন থেকে বের হয়ে আসেন ও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ও ১৪ তারিখ শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো লিখিতভাবে দিতে বলেন। রাত আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান। ১৪ জানুয়ারি, শুক্রবার সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি লিখিতভাবে ভিসির কার্যালয়ে জমা দেন। এরপর দুপুর ১২টায় ভিসি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। ১টায় প্রতিনিধিদল বের হয়ে আসে। উপাচার্য ১ মাস সময় চেয়ে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা সময় না দিয়ে বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে প্রভোস্টের রুমে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। তিন দফার দাবি মেনে নিতে পরদিন ৭টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেন তারা। ১৫ জানুয়ারি, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে দাবি আদায়ে বিক্ষোভরত ছাত্রীদের ওপর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ছাত্রলীগ হামলা করে বলে দাবি ওই সময় আন্দোলনরত ছাত্রীদের। ১০/১২ জনকে বেধড়ক মারধর করে তারা। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। ১৬ জানুয়ারি, রোববার এদিন দুপুর আড়াইটায় আইআইসিটি ভবনের ৩৩৩ নম্বর কক্ষে ভিসিকে অবরুদ্ধ করা হয়। বিকাল ৪টায় পুলিশ আসে। বিকাল সাড়ে ৫টায় সংঘর্ষ বাধে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় উপাচার্যকে উদ্ধার করে তার বসভবনে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত ৯টায় জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য এবং সোমবার ১২টার আগে শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। এর সঙ্গে তিনি প্রভোস্টের পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন। পুলিশের হামলার পর রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা এক দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ১৭ জানুয়ারি, সোমবার সকাল ৭টা থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা এবং গোলচত্বর মূল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। রোববারের হামলার ঘটনায় ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই দিন পুলিশ ২০০ থেকে ৩০০ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটক থেকে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেয় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। ১৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারি, বুধবার সকাল ১০টায় উপাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ২ ফেব্রম্নয়ারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন। বিকাল ৩টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে এসে ব্যর্থ হয়ে সাড়ে ১১টার দিকে ফিরে যান। ২০ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার ১টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টার দিকে অনশনকারীদের মধ্যে প্রথম একজন অসুস্থ হন। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১১টায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ২১ জানুয়ারি, শুক্রবার ৩টা ৬ মিনিটের দিকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ফোনালাপ। সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলনে শাহেরিয়ার আবেদীন বললেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ঢাকা যাবেন না শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষকরা রাত ১১টার দিকে ঢাকায় যান। ২২ জানুয়ারি, শনিবার দুপুর ৩টার দিকে কাফন মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে হেয়ার রোডে শিক্ষামন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে শিক্ষকদের বৈঠক হয়। রাত ৮টা থেকে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল আসেন শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে। দিবাগত রাত ১টার পরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। আলোচনায় উপাচার্যের পদত্যাগের কোনো বার্তা পাননি শিক্ষার্থীরা। ২৩ জানুয়ারি, রোববার ৭টা ২০মিনিটে উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদু্যতের লাইন বিছিন্ন করেন শিক্ষার্থীরা। অনশনকারী রাতুলের অস্ত্রোপচার হয় রাত পৌনে ১১টায়। সকাল থেকে রোড পেইন্টিং, গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ জানুয়ারি, সোমবার ক্যাম্পাসে ঢোকার ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করে ঢুকতে হবে- এ পদ্ধতি চালু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টায় সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বহিরাগতদের ইন্ধন বা অংশগ্রহণের অভিযোগের প্রতিবাদ করেন তারা। সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে ভিসির জন্য খাবার দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন প্রক্টর। ২৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার শিক্ষকরা খাবার নিয়ে ভিসি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের খাবার রাখেননি। দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর জাফর ইকবাল আসার খবর পেয়ে পুলকিত হন শিক্ষার্থীরা। ২৫ জানুয়ারি, বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রিয় শিক্ষক ডক্টর জাফর ইকবালের আশ্বাসে তার হাতে পানি পান করে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।