১৬ জানুয়ারির ঘটনার ভিডিও ক্লিপ চেয়েছে তদন্ত কমিটি

শাবির অবরোধ প্রত্যাহার হলেও আন্দোলন চলবে

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

শাবি প্রতিনিধি
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে ভিসির বাংলো, প্রধান ফটক, অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহেরিয়ার আবেদীন নিশ্চিত করেন। অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে এমনটি বুধবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ। এরপর বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় শাহেরিয়ার আবেদীন অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, 'আমরা জাফর ইকবাল স্যারের অনুরোধে ও আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ভিসির বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, প্রত্যেকটি অ্যাকাডেমিক ভবনের অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছি। প্রত্যেকটির তালা খুলে দিয়েছি। রেজিস্ট্রার ভবন ও কনট্রোলার অফিসের তালাও খুলে দেওয়া হবে।' আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সকলকে নিয়ে আলোচনা সভা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সকালে অনশন ভাঙার পর সারাদিন শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।' \হকর্মসূচি সম্পর্কে বুধবার রাতে মোহাইমিনুল বাশার রাজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমাদের আন্দোলনের ধরন পাল্টানো হবে। আমরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, রোড পেইন্টিং করব, সবার সাথে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।' এদিকে ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শাহেরিয়ার আবেদীন বলেন, 'ভিসি পদত্যাগের প্রজ্ঞাপন যতক্ষণ না জারি হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।' গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে অ্যাকাডেমিক ভবন 'এ' ছাড়া বাকি ভবনগুলো এবং প্রশাসনিক ভবন দুটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বালুর বস্তা, রড ও বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেছিলেন। এরপর ভিসির বাংলো অবরোধ করে রাখেন তারা। অবশেষে শিক্ষালয়টির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের অনুরোধে ও আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা টানা সাত দিনের অনশন ভাঙেন এবং অবরোধ প্রত্যাহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ 'গুলিবর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ' এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার। শুরুতে মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত হন। এরপর বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক জাফর ইকবালের আশ্বাসে একযোগে অনশনকারী সকল শিক্ষার্থী অনশন ভাঙেন। ১৬ জানুয়ারির ঘটনার 'ভিডিও ক্লিপ' চেয়েছে তদন্ত কমিটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত রোববারের (১৬ জানুয়ারি) সংঘর্ষের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে ভিডিও ক্লিপ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ডক্টর মো. রাশেদ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে। সব মহলের সহযোহিতা কামনা করে বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি বলেন, 'সুষ্ঠু ও যথাযথ তথ্য উদঘাটনের জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও প্রমাণাদি সংগ্রহের উদ্দেশ্য তথ্য এবং ভিডিও ক্লিপ দেওয়ার অনুরোধ করছি।' তদন্ত কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন। ভিডিও ক্লিপসহ যেকোনো তথ্য ফিজিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিনের অফিস কক্ষের সামনে রক্ষিত বাক্সে জমা দেওয়া যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়। এছাড়া বক্তব্য ও ভিডিও ক্লিপ ইমেইল ও ডাকযোগেও পাঠানো যাবে বলে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বক্তব্য অথবা তথ্যসমূহ নংপযধষষ২০২২@ংঁংঃ.বফঁ ইমেইলে প্রেরণ করা যাবে। কেউ চাইলে ডাকযোগেও বক্তব্য ও তথ্য 'স্কুল অব ফিজিক্যাল সায়েন্সেস, শাবিপ্রবি, সিলেট' এই ঠিকানায় প্রেরণ করতে পারবেন। আগ্রহীগণ ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চাইলে জানাতে পারবেন।'