শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওমিক্রন হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর!

ম লাইজুল ইসলাম
  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০১

অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য ওমিক্রন খুবই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাই তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই রোগীদের ওপর ওমিক্রন সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এসব রোগীর মৃতু্য ঝুঁকিও রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ওমিক্রন লক্ষ্ণণ নিয়ে রোগী আসলেও তাদের ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। এই রোগীদের খুব একটা সমস্যাও হচ্ছে না। তবে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রথম করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিম্বাবুয়ে থেকে আগত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই খেলোয়াড়ের শরীরে ওমিক্রন পাওয়া গেছে। এই দেড় মাসে বাংলাদেশেও ৬৯ জন ওমিক্রন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে তদের মধ্যে শিশু ও পূর্ণবয়স্ক কয়জন তা জানা যায়নি। দেশের বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এদিকে, সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে পাওয়া গেছে টেস্টের ৮০ ভাগই ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী। তবে এই ৮০ ভাগ পুরো দেশ জুড়ে নয়। শুধমাত্র যাদের স্যাম্পল ওমিক্রনের জন্য টেস্ট করা হয়েছে তাদের ৮০ ভাগ। এই অবস্থায় ওমিক্রনকে ভয় পাচ্ছে না দেশবাসী। সবাই যে যার মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক পরায় অবহেলা, জনসমাগম স্থান এড়িয়ে না চলা, টিকা না নেয়ার মতো বিষয়গুলো খুব ভাবাচ্ছে সরকারকে। কীট তত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, 'ওমিক্রন বাংলাদেশে ডিসেম্বরে ঢুকেছে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত যারা শনাক্ত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ভালো আছেন। ডেল্টা ও ডেল্টা পস্নাসের মতো এতটা ভয়ংকর নয় ওমিক্রন। তবে চিন্তার বিষয় কিছুটা আছে। এই ভ্যরিয়েন্টে আক্রান্ত শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগীদের সমস্যা হতে পারে। তাদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে ওমিক্রন। তাই এই রোগীদের সাবধানে থাকতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'টেস্ট এখনো কম হচ্ছে। যে পরিমাণ রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে, সেই পরিমাণ করোনার টেস্ট করা হচ্ছে না। মানুষ স্বাস্থ্যবিধিও মেইনটেইন করছে না। এই অবস্থায় মানুষের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এর আগে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যাতে বোঝা যায় কে কে করোনার ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী।' এই কীট তত্ত্ববিদ আরও বলেন, 'সরকার হয়তো চাচ্ছে দেশের মানুষের হার্ড ইউমিউনিটি তৈরি হোক। তাই যে যেভাবে চলছে তাকে সেভাবেই চলতে দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে সরকার অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করত। যেহেতু এখন পর্যন্ত এমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাই এটিই ধারণা করা যেতে পারে।' তিনি বলেন, 'এখন হাসপাতালগুলোতে যে রোগী তারা ডেল্টা আক্রান্ত। ওমিক্রন আক্রান্ত বা এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশির ভাগেরই সিভিয়ারিটি খুব কম। এর মানে এরা বেশির ভাগই ওমিক্রন আক্রান্ত। কিন্তু যেহেতু টেস্ট কম তাই বোঝা যাচ্ছে না কে ওমিক্রনে আক্রান্ত। ওমিক্রন যেহেতু ফুসফুসে আক্রমণ কম করে তাই এবার মানুষের মৃতু্য হারও কম। বাসায় বসেই ওষুধ খেয়ে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ওমিক্রন থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য হাসপাতালমুখীও কম।' রোগগত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসাইন বলেন, 'ওমিক্রন মোটেও কম ঝুঁকিপূর্ণ না। ইউরোপে এর কার্যকারিতা কম দেখা যাওয়ার কারণ সেখানে সবাই টিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো অর্ধেক মানুষও টিকার আওতায় আসেনি। আর আমাদের দেশেই বা মৃতু্য কম কোথায়, প্রতিদিনই তো গড়ে ১৫ জনের বেশি মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন মনে হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কম। কিন্তু আনুপাতিক হারে এই সংখ্যা কিন্তু অনেক বেশি। প্রতি ১০০ জনে যদি ২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয় তবে প্রতি ১০ হাজার জনে ২০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হবে। এই হিসেবে অবস্থা কি ভালো না খারাপ তা বোঝা যায়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। অতি অবশ্যই টিকা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাইদুল ইসলাম বলেন, 'এখন প্রচুর করোনা রোগী আসছে। তবে তাদের শরীর আগে মতো এতটা খারাপ হয় না। ডেল্টা আক্রান্ত রোগী যেমন শরীর অনেক কাহিল হয়ে যেত এটা তেমন নয়। সিকনেস খুব কম। কাশি, সর্দিও খুব কম নিয়ে আসে। হয়তো একদিন একটু জ্বর ছিলো এমন রোগী আসে। পরে টেস্ট করলে দেখা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত। আমরা তাই ধারণা করছি এরা কোভিড ওমিক্রন আক্রান্ত। তবে জিনোম সিকোয়েন্স করলে পুরোপুরি বোঝা যাবে।' বর্তমানে যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের বেশির ভাগ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত উলেস্নখ করে এই চিকিৎসক বলেন, 'যারা হাসপাতালে ভর্তি তাদের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। এদের অসুস্থতা দেখেই বোঝা যায় এরা করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। যেহেতু এখনো করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশ থেকে যায়নি, তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'এখন রোগীদের টিকা গ্রহণে অনেক আগ্রহ বেড়েছে। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করছে। মাঝখানে তো কোনো লাইনই হতো না। এখন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণ করছে। আর টেস্টের প্রতি কিছুদিন আগেও আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ছে। আগে বললেও করোনার আরটিপিসিআর টেস্ট করতে না রোগীরা। এখন বললেই টেস্ট করতে যাচ্ছে। এটা খুবই ভালো একটি দিক।' ডা. সাইদুল বলেন, 'এখন যারা আক্রান্ত তাদের সংক্রমণ মৃদু, খুব দ্রম্নত (মানে পাঁচ দিনের মধ্যে) কোভিড নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে ও ইনফেকটিভিটি বেশি। এখন এই ইসফেকশন যদি বাড়তে থাকে তবে সমস্যা বাড়বে। যেহেতু এই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত করতে পারে বেশি তাই যদি এক হাজারেও ৫ জন রোগী হাসপাতালে আসতে হয় তবে ভেবে দেখেন ১৬ কোটিতে কত রোগী ভর্তি হবে হাসপাতালে। তাই রোগী বাড়লে মৃতু্য বাড়বেই।' বক্ষব্যাধির এই পরিচালক বলেন, 'যাদের আগে থেকে শ্বাসকষ্ট আছে, যাদের অ্যাজমা সমস্যা আছে তাদের অধিকতর সাবধান হতে হবে। আমাদের হাসপাতালে যারা আসছেন তাদের দেখা গেছে এই সমস্যার করোনা রোগীরা ভুগছেন বেশি। তাই শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ এই জাতীয় রোগীদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে ওমিক্রন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে