ফাগুনের ছোঁয়ায় রঙিন কক্সবাজার সৈকত

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম জাবেদ আবেদীন শাহীন
পহেলা ফাল্গুন বাঙালির বসন্ত উৎসবের দিন। এরই সঙ্গে মিলেছে ভালোবাসা দিবস। বসন্ত আর ভালোবাসা মিশে একাকার হওয়ার এমন দিন প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে সোমবার কক্সবাজার সমুদ সৈকতে ছুটে এসেছিলেন ভ্রমণপিপাসুরা। সকাল থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে একটু অলস সময় কাটানো, সমুদ্রস্নান আর ঢেউয়ের সঙ্গেও যেন চলছে ভালোবাসার মিতালি। সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে তারা মেতে উঠেছেন হাসি-গানে। অনেকে সমুদ্রস্নান ও প্রিয় মুহূর্ত ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও সৈকতে মেতেছেন ফাগুন আর ভালোবাসার আনন্দে। বিশেষ দিবসগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ায় দারুণ খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কঠোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন অসংখ্য পর্যটক। তাদের এখন পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, ইনানী, হিমছড়ি ছাড়াও দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝনা, রামুর বৌদ্ধবিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ঢাকার রামপুরা এলাকার নবদম্পতি ইমতিয়াজ হাছান ও ইশরাক আরা জানান, 'বিয়ে করেছি মাত্র দুসপ্তাহ হচ্ছে। এর মধ্যে একদিকে বসন্ত, অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস। দিবসটি আমাদের জন্য স্পেশাল। এই দিনটা সমুদ্রের পাড়ে কাটানোর জন্য আমরা কক্সবাজারে হানিমুনে এসেছি। প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে সমুদ্র সৈকতের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে ছুটে আসা। সৈকতের খোলা পরিবেশে ঘুরতে পারা অন্যরকম এক অনুভূতি। সত্যি খুবই ভালো লাগছে। খুলনা থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার মহসীন বারী বলেন, কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যা কখনো পুরনো হয় না। সত্যি যেন বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে সৈকতে। এখানে না এলে বোঝা যাবে না এই জায়গা কত সুন্দর। সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ালেই মনে আনন্দ লাগে। মা-বাবা, ভাইবোনসহ ১৮ জনের পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি। সবাই দারুণ খুশি।' এদিকে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে পুরোদিন প্রেমিক-প্রেমিকাকে, ছেলে মাকে, মা-বাবা সন্তানদের এবং ভাইবোনের মধ্যে ছিল প্রাণঢালা ভালোবাসার আবেগ। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ১৪ ফেব্রম্নয়ারি বাসন্তী শাড়ি, হলুদ পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত নানাবয়সি নরনারী ফুল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কারও হাতে ছিল লাল গোলাপ, রজনীগন্ধার স্টিক, কারও হাতে ছিল প্রিয় মানুষকে ভালোবাসার উপহার দিতে নানা সামগ্রী। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের ঝিনুক ব্যবসায়ী ছৈয়দ আলম বলেন, শীতকালে স্বাভাবিকভাবে প্রচুর পর্যটক আসেন। কিন্তু এবারে অতিরিক্ত পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। এতে বেচা-বিক্রি বেশি হওয়ায় আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। একই কথা জানান বার্মিজ পণ্য ব্যবসায়ী তৌহিদুর ইসলামও। হোটেল কক্সস টুডের ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, বিশেষ দিবসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তাই ভালোবাসা দিবসের লাভ প্রতীকের ব্যবস্থা করেছি। যেখানে পর্যটকরা ছবি তুলতে পারবেন। কক্সবাজার সী-সেইভ লাইফ গার্ড ইনচার্জ মো. শুক্কুর বলেন, ভালোবাসা দিবসে অতিমাত্রায় পর্যটক এসেছে সৈকতে। সমুদ্রে গোসল করার সময় যেন পর্যটক স্রোতে ভেসে যেতে না পারে সেজন্য লাইফ গার্ডের কর্মীরা সর্বদা নজরদারি রাখছেন। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফখরুল ইসলাম জানান, পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সবখানে নিরাপদে ঘুরতে পারেন সেজন্য বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটক জোনগুলোতে জোরদার রয়েছে টুরিস্ট পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাছাড়া হোটেল-মোটেলের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আলাদা সিভিল টিম রাখা হয়েছে।