শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখে গুটিকয়েক পত্রিকা

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
অমর একুশে

বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তখন মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশের প্রায় সব শহরে ভাষার দাবিতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। তবে ভাষার জন্য মানুষের আবেগ-ভালোবাসার এই বিষয়টি তখনকার দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রম্নয়ারির পরও। বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, প্রাণহানির বেদনাবিধূর সেই ঘটনা ২২ ফেব্রম্নয়ারি বা এর পরের দিনগুলোতে পত্রপত্রিকায় তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

তবে কয়েকটি সাপ্তাহিক ও দৈনিক মিলস্নাত সংবাদ প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দৈনিক আজাদের সাহসী ভূমিকা দেখা গেলেও সরকারের চাপের মুখে তাদের শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করতে হয়।

তখন উলেস্নখযোগ্য দৈনিক বলতে ছিল দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ এবং মুসলিম লীগ সমর্থক মর্নিং নিউজ।

ছিল দৈনিক ইনসাফ এবং দৈনিক মিলস্নাত। ভাষা আন্দোলনের সময়ই ১৪ ফেব্রম্নয়ারি পূর্ববাংলা জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে পূর্ববাংলা সরকার পাকিস্তান অবজারভারের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল তমদ্দুন মজলিশের মুখপত্র সৈনিক, সাপ্তাহিক ইত্তেফাক ও সাপ্তাহিক নওবেলাল। এ ছাড়া জিন্দেগী ও চাষী নামে দু'টি সাপ্তাহিক ছিল।

২২ ফেব্রম্নয়ারি মর্নিং নিউজ পত্রিকায় দু'টি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছিল। তার একটি ছিল ২১ ফেব্রম্নয়ারির গুলিবর্ষণ ও ছাত্রদের আচরণ নিয়ে। পত্রিকাটি ২১ ফেব্রম্নয়ারি ও সমগ্র ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারকে ভারতের দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং হিন্দুদের দ্বারা সংগঠিত বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত করে পুরো ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক চরিত্র দেওয়ার চেষ্টা চালায়। প্রতিবেদনে তারা মিথ্যা তথ্য দেয়। তৎকালীন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আকরম খাঁর মালিকানাধীন আজাদ ২১ ফেব্রম্নয়ারির দিন সন্ধ্যায়ই বিশেষ জরুরি সংখ্যা বা টেলিগ্রাম প্রকাশ করে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী আজাদের এ-সংক্রান্ত পরিবেশনা ছিল অনবদ্য। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহলের চাপের ফলে আজাদের এই বিপস্নবী ভূমিকা এক পর্যায়ে স্তিমিত হয়ে যায়। মোহাম্মদ মোদাব্বেরের সম্পাদনায় মিলস্নাত পত্রিকাও ছিল ভাষা আন্দোলনের জোরালো সমর্থক। গুলিবর্ষণে নিহতদের সংবাদটি ব্যানার হেডিং করেছিল মিলস্নাত। তাদের আরেকটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, 'রাতের আঁধারে এত লাশ যায় কোথায়?'

সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে সৈনিক, ইত্তেফাক, নওবেলাল ছিল নিজস্ব ভূমিকায় উজ্জ্বল। সৈনিক সংবাদ-সম্ভারে ভরপুর যেমন ছিল, থাকত অতিরঞ্জনও। সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়তে ছিল আবেগের বাড়াবাড়ি। ইত্তেফাক কিংবা নওবেলালের প্রতিবেদনে তথ্যগত ভুল কম থাকত, কিন্তু আবেগ বা উচ্ছ্বাস কম ছিল না। বিশেষ করে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে এর মাত্রা ছিল অনেক বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে