ধর্মের পথে জিহাদ মুমিনের ফরজ

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
খোশ আমদেদ মাহে রমজান
আত্মসংযম আর আত্মশুদ্ধির কষ্টিপাথরে নিজেকে যাচাই ও বিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সুযোগে ভরা মাহে রমজানের আজ ত্রয়োবিংশ দিবস। বেহেশতি সৌরভ ও খোদা প্রেমের জলসার এই মাস মহান আলস্নাহর পক্ষ থেকে মানুষের সবচেয়ে বড় রহমতের উৎসব। ধর্ম রক্ষায় জিহাদ ঘোষণা এবং এতে সক্রিয় অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার সময়। তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেওয়া হয়েছে অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। হতে পারে তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ কর যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার এমনও হতে পারে কোনো জিনিসকে তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আলস্নাহ সবকিছু জানেন কিন্তু তোমরা জানো না। (সুরা বাকারা: ২১৬) অন্যত্র আলস্নাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের কী হলো, তোমরা কেন আলস্নাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়ছ না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরি করে দাও। যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আলস্নাহর রাস্তায় আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ে যাও। নিশ্চিত জেনে রাখ, শয়তানের কৌশল আসলেই দুর্বল। (সুরা নিসা: ৭৫-৭৬) হাদিসে এসেছে, যখন দুটি দল (মুসলিম ও অমুসলিম) পরস্পর মুখোমুখি হয়। যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো শান্তিপূর্ণ পথ খোলা থাকে না তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের সেখান থেকে পলায়ন করা বৈধ নয়। তখন উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে যায় দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকা। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! যখন কোনো দলের সাথে তোমাদের মোকাবিলা হয়, তোমরা দৃঢ়পদ থাকো এবং আলস্নাহকে স্মরণ করতে থাকো বেশি বেশি করে। আশা করা যায়, এতে তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে। আর আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, অন্যথায় তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দেবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব, তোমরা ধৈর্যধারণের পন্থা অবলম্বন কর, নিশ্চয় আলস্নাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা আনফাল: ৪৫-৪৬) যখন শত্রম্নবাহিনী কোনো মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আকস্মিক আক্রমণ করে তখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপর আবশ্যক হয়ে যাবে তাদের গতিরোধ করা। তারা যদি সক্ষম না হয় তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তী লোকদের উপর পর্যায়ক্রমে জিহাদ ফরজ হবে। রাষ্ট্রপ্রধান যখন কোনো সম্প্রদায়কে জিহাদে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তখন জিহাদে যাওয়া আবশ্যক হবে। তবে, কারও কোনো ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো, যখনই তোমাদের আলস্নাহর পথে জিহাদে বের হতে বলা হয়, তখনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাক? তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবনকে বেশি পছন্দ করে নিয়েছ? যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখ, দুনিয়ার জীবনের এমন সাজসরঞ্জাম আখেরাতে খুবই সামান্য বলে প্রমাণিত হবে। তোমরা যদি না বের হও তাহলে আলস্নাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের জায়গায় আরেকটি দলকে নিয়ে আসবেন, তখন তোমরা আলস্নাহ তায়ালার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।' (সুরা তাওবা: ৩৮-৩৯) আলস্নাহ তায়ালা জিহাদকে পবিত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে বৈধ করেছেন। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, আর এ কাফেরদের সাথে এমন যুদ্ধ করো যেন গোমরাহী ও বিশৃঙ্খলা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন পুরোপুরি আলস্নাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তারপর যদি তারা ফিতনা থেকে বিরত হয় তাহলে আলস্নাহই তাদের কার্যকলাপ দেখবেন। (সুরা আনফাল: ৩৯) অন্যত্র আলস্নাহ তায়ালা বলেন: তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আলস্নাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখ জালেম তথা অত্যাচারী ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। (সুরা বাকারা: ১৯৩) তবে ধর্মের পথে বিশেষ উদ্দেশ্য ছাড়া তুচ্ছ বিষয় নিয়ে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে ইসলামে অনীহা প্রকাশ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- আবু মুসা আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর কাছে একজন লোক এসে বললেন: একজন লোক যুদ্ধলব্ধ সম্পদের আশায় যুদ্ধ করে, আরেকজন নিজের নাম যশ-খ্যাতির জন্য যুদ্ধ করে এবং অন্যজন নিজের অবস্থান মানুষকে দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে কে আলস্নাহ তায়ালার রাস্তায় যুদ্ধ করে? রাসূল (সা.) বললেন: যে ব্যক্তি আলস্নাহ তায়ালার বাণী তথা বিধানকে উচ্চকিত করার জন্য যুদ্ধ করে সেই আলস্নাহ তায়ালার রাস্তায় যুদ্ধ বা জিহাদ করে। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান, বায়হাকী, নাসায়ী, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ) অন্য এক আয়াতে আলস্নাহ তায়ালা বলেছেন: হারাম (সম্মানিত) মাসের বিনিময় তো হারাম মাসই হতে পারে এবং সমস্ত মর্যাদা সমপর্যায়ের বিনিময়ের অধিকারী হবে। কাজেই যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করবে তোমরাও তার ওপর ঠিক তেমনিভাবে হস্তক্ষেপ কর। তবে আলস্নাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, আলস্নাহ তায়ালা খোদাভীরুদের সাথে আছেন (যারা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থাকে)। (সুরা বাকারা: ১৯৪) সুরা হজ এর ৪০ নম্বর আয়াতে আলস্নাহ তায়ালা বলেন: তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে যে, তারা বলেছিল, 'আলস্নাহ আমাদের রব।' যদি আলস্নাহ তায়ালা লোকদের একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে যেখানে আলস্নাহর নাম বেশি বেশি উচ্চারিত হয় সেসব আশ্রম, গির্জা, ইবাদতখানা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেওয়া হতো। আলস্নাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করবেন যারা তাঁকে সাহায্য করে। আলস্নাহ তায়ালা বড়ই শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী। শত্রম্নদের বিরুদ্ধে জিহাদ বেশ কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন- কাফের, মুনাফিক ও মুরতাদদের সঙ্গে যুদ্ধ। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, ঈমানদারদের মধ্যকার দুটি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দুটি দলের কোনো একটি দল অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে বসে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই কর, যতক্ষণ না তারা আলস্নাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায়বিচারের সাথে মীমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। নিশ্চয় আলস্নাহ তায়ালা ইনসাফ তথা ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা হুজুরাত: ৯)