বিজয়ের বার্তা আসতে থাকে নানা প্রান্ত থেকে

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৩২

যাযাদি রিপোটর্

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর। একাত্তরের এ দিনটি ছিল জাতির জন্য আনন্দঘন দিন। বিজয়ের বাতার্ আসছিল দেশের নানা প্রান্ত থেকে। হানাদারমুক্ত হচ্ছিল একেকটি জনপদ। মুক্তিযুদ্ধ জানান দিচ্ছিল কোমল হৃদয়ের বাঙালিও হয়ে উঠতে পারে বড় কঠিন ও কঠোর। ১৯৭১ সালের এইদিনে মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কলারোয়া, দামুড়হুদা, সুনামগঞ্জ, কুলাউড়া, মেহেরপুর, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, উলিপুর, ঝিনাইদহ, বড়লেখা, বকশীগঞ্জ, ফেনী, শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গা, দিরাই-শাল্লা, মহেশপুর, ছাতক, কেন্দুয়া, যশোর, রাজনগর ও পীরগঞ্জ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আখাউড়া ছিল যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। যুদ্ধে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনসহ গোটা আখাউড়া লÐভÐ হয়েছিল। পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। আখাউড়ায় হয়েছিল সম্মুখযুদ্ধ। দরইন গ্রামে ১৯৭১ সালে প্রচÐ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ৯ জন শহীদ হন। তাদের মধ্যে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামাল। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে কলারোয়া মুক্ত করেন। স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন শিক্ষক শেখ আমানুল্লাহ। সম্মুখ সমরে পরাজয় জেনে এইদিনে পাকসেনারা দামুড়হুদা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। বাংলার দামাল ছেলেরা বিজয়ের গান ও পতাকা নিয়ে এগিয়ে যায় জেলা শহরের দিকে। এইদিনে মুক্তিবাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে হানাদাররা সুনামগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবার্ত্মক যুদ্ধ শুরু হলে সুনামগঞ্জ শহর শত্রæমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন ভাট নগরকান্দি সীমান্ত থেকে গৌরারং, ক্যাপ্টেন যাদব বনগঁাও সীমান্ত থেকে আমবাড়ি এবং মেজর মোতালিব সুরমা নদীর উত্তরপাড় যোগিরগঁাওয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। ৫ ডিসেম্বর শেষ রাতেই মেজর মোতালিব সহযোদ্ধাদের নিয়ে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে সুনামগঞ্জে পৌঁছে যান। কিন্তু কোথাও হানাদার বাহিনী নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে রাতেই হানাদার পাকবাহিনী সিলেটের দিকে পালিয়ে যায়। এদিন মুক্ত হয় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা। এ যুদ্ধে পাকহানাদারদের হাতে শহীদ হন ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা। হত্যা করা হয় অনেক গ্রামবাসীকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতীক) ও তার সহযোগী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ৫ ডিসেম্বর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন কামালপুর থেকে পাশ্বর্বতীর্ উপজেলা বকশিগঞ্জ হয়ে পাকিস্তানি মেজর আইয়ুব জামালপুর যাবে। সেই সূত্র ধরে টিকরকান্দি এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। মেজর আইয়ুব সঁাজোয়া গাড়ি নিয়ে সেই রাস্তায় আসার পথে শুরু হয় যুদ্ধ। স্থলমাইন বিস্ফোরণ আর গুলির বিনিময়ের মধ্যে পরাজিত হয় মেজর আইয়ুবসহ পাকসেনারা। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ভোরে শত শত লোক বকশিগঞ্জ সড়কে এসে জড়ো হয়। সবার কণ্ঠে মুখরিত হয়ে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। সেখান থেকে দলে দলে উচ্ছ¡সিত মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা আসে শ্রীবরদী বাজারের পুরাতন হাসপাতাল মাঠে। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওইসব মুক্তিকামী মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধারা।