এরশাদের বিস্ফোরক মন্তব্য

চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
নিবার্চনের আগে জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে রীতিমতো বোমা ফাটালেন সাবেক এই সামরিক শাসক। তিনি অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসা করতে এবং বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তা স্পষ্ট না করেই আলোচিত এই রাজনীতিবিদ বলেছেন, তাকে ‘দমিয়ে রাখা’ যাবে না। নিবার্চন সামনে রেখে পাটির্র মনোনয়নপ্রক্রিয়া শুরু করে দেয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না এরশাদকে। তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পাটির্র এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনেকটা হঠাৎ করেই বনানীতে নিজের রাজনৈতিক কাযার্লয়ের সামনে এসে গাড়ি থেকে না নেমে নেতাকমীের্দর সামনে কয়েক মিনিট কথা বলেন জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান। সেখানেই তার বিস্ফোরক বক্তব্য আসে। এরশাদ বলেন, ‘আজ বলতে এসেছি, আমাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না, এগিয়ে যাব আমার বয়স হয়েছে, চিকিৎসা করতে দেবে না; বাইরে যেতে দেবে না। মৃত্যুকে ভয় করি না।’ নেতাকমীের্দর অভয় দিয়ে এরশাদ বলেন, তোমাদের কোনো ভয় নেই। জাপা তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। জাপা চিরদিন নিবার্চন করেছে, এবারও করবে। ২০১৪ সালের নিবার্চনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভতির্ হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভতির্ থাকা অবস্থাতেই তিনি এমপি নিবাির্চত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান। এবার একাদশ সংসদ নিবার্চনের আগে জাতীয় পাটির্র মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভতির্র খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই জাতীয় পাটির্র জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক’ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেয়া হতে পারে। কিন্তু জাতীয় পাটির্র তখনকার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নিবার্চনে অংশ নেবেন। এর মধ্যে জাতীয় পাটির্র মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন। ঋণ খেলাপের অভিযোগে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে গত সোমবার অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় পাটির্র মহাসচিব পদে পরিবতের্নর ঘোষণা আসে। এরশাদের ‘সন্তানতুল্য’ হওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় পাটিের্ত ‘সরকারঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব রাঙ্গা বলেন, রক্তে হিমোগেøাবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’। এ কারণে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়। ঘুমের ডিস্টাবর্ হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে। নতুন মহাসচিব দাবি করেন, এরশাদ এখন ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট’ থাকলেও চিকিৎসার জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। কিন্তু পাটির্র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১০ ডিসেম্বরের পর হয়তো এরশাদ বিদেশে যেতে পারেন। বৃহস্পতিবার বনানীর কাযার্লয়ের সামনে এসে নতুন মহাসচিবকে নিয়েও কথা বলেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘পুরনো মহাসচিবকে ভালোবাসতাম। নতুন মহাসচিবকে তোমরা ভালোবেসো সে নতুন, তাকে সাহায্য করো।’ ৮৮ বছর বয়সী এরশাদ বলেন, বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব। ২৭ বছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি, পাটির্ ছাড়ি নাই সব নিভর্র করে তোমাদের উপর। কেউ পাটির্ ছেড়ে যেও না, আমাকে প্রতিশ্রæতি দাও পাটির্ অফিসের সামনে এই ঝটিকা সফর শেষে বিদায় নেওয়ার সময় এরশাদ তার কমীের্দর বলেন, আমার বøাড শটের্জ আছে, একটু বাসায় যাচ্ছি খেতে। এ সময় কাযার্লয়ের সামনে কমীর্রা ¯েøাগান ধরেন- ‘এরশাদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’।