ভোট পাহারায় কঠিন চ্যালেঞ্জে বিএনপি

বিএনপির শীষর্ নেতারা মনে করেন, সাধারণ মানুষের একটি বিশাল অংশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের পক্ষে। তাই তাদের সম্পৃক্ত করা গেলে যেকোনো শক্তিশালী পক্ষের ভোট ডাকাতি সহজেই ঠেকানো যাবে

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ভোট কারচুপি ও জালভোট ঠেকাতে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি ব্যালট ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা প্রতিহত করতে নিবার্চনের মাঠে দলীয় নেতাকমীের্দর শক্ত অবস্থান গড়ে তোলা বিএনপির জন্য এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যেসব এলাকার সক্রিয় নেতাকমীের্দর বড় অংশ এরইমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি কিংবা আত্মগোপনে রয়েছেন, সেখানকার ভোটের মাঠ কোন ছকে দ্বিতীয় সারির নেতাকমীের্দর দিয়ে সাজানো যায় সে পরিকল্পনা তৈরি বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দঁাড়িয়েছে। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে দলীয় হাইকমান্ড জাতীয় ঐক্য জোটের শীষর্ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে করণীয় নিধার্রণের চেষ্টা করছেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, খুলনা, গাজীপুর, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিবার্চনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কীভাবে নিজেদের পোলিং এজেন্টের অবস্থান নিশ্চিত করা যায় এরইমধ্যে তার খসড়া ছক তৈরি করা হয়েছে। এতে ১১টি বিষয়ে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এ খসড়ার কোনো ফঁাকফোকর রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে এটি এখনো চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। দলের শীষর্ নেতাদের আশঙ্কা, সবের্শষ চার সিটি করপোরেশন নিবার্চনের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও ক্ষমতাসীনরা সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র ছাড়া করার নীলনকশা তৈরি করে রেখেছে। এ কাজে তারা দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং পুলিশ প্রশাসনকেও ব্যবহার করতে পারে। ভোটের আগে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের তালিকা জোগাড় করে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি নানা অজুহাতে তাদের গ্রেপ্তার করারও শঙ্কা রয়েছে। তাই এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেই ভোট পাহারার ছক তৈরি করা হবে বলে জানান বিএনপি নেতারা। এদিকে ভোটকেন্দ্রে বিএনপি দলীয় পোলিং এজেন্টের শক্ত অবস্থানের মুখে ভোট জালিয়াতির সুযোগ না পেয়ে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা যাতে ব্যালট ছিনতাই কিংবা বিএনপিসমথির্ত ভোটারদের সরিয়ে দেয়ার মিশনে নামতে না পারে সে ছকও তৈরি করছে বিএনপি। এতে দলসমথির্ত ভোটারদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির শীষর্ নেতারা মনে করেন, সাধারণ জনগণের একটি বিশাল অংশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের পক্ষে। তাই তাদের সম্পৃক্ত করা গেলে যেকোনো শক্তিশালী পক্ষের ভোটডাকাতি সহজেই ঠেকানো যাবে। এমনকি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিবার্চনকেন্দ্রিক প্রশাসনিক অনিয়মও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এদিকে ভোটের মাঠের অনিয়ম-দুনীির্ত ও নানা ধরনের জালিয়াতি গণমাধ্যমকমীর্রা যাতে নিবিের্ঘœ প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতেও নানামুখী ছক কষছে বিএনপি। কোনো ক্ষেত্রে তারা অপরাগ হলে তা যেন দ্রæত ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যায় এজন্য বিশেষ গ্রæপও তৈরি করা হচ্ছে। দলের দায়িত্বশীল বেশ ক’জন নেতাকে এরইমধ্যে এ ব্যাপারে আগাম দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলীয় পোলিং এজেন্টের তালিকা যাতে আগেভাগেই ফঁাস না হয়, এজন্য তারা সবোর্চ্চ সতকর্তা অবলম্বন করছে। এছাড়া প্রতিজন পোলিং এজেন্টের বিপরীতে বিকল্প হিসেবে একাধিক নেতাকমীের্ক প্রস্তুত রাখার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। যাতে নিবার্চন কমিশনের কাছে পোলিং এজেন্টদের তালিকা হস্তান্তরের আগে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে দ্রæত বিকল্প কারো নাম সংযোজন করা যায়। এছাড়া বিএনপি দলীয় যেসব নেতাকমীর্র বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে, বিশেষ করে যারা এখনো ওইসব মামলায় আদালত থেকে জামিন নিতে পারেননি তাদেরকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিবার্চন না করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, নিবার্চন পরিচালনাসহ সাবির্ক বিষয় দেখভাল করতে ১২টি উপকমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নিবার্চন পরিচালনা কমিটি, নিবার্চন কমিশন, মিডিয়া কমিটি, সোস্যাল মিডিয়া কমিটি, অথর্ কমিটি, প্রচার কমিটি। বিএনপি সূত্রমতে, শেষ পযর্ন্ত ভোটের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া বিএনপি এ ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রাথীের্দর কাছ থেকে প্রতিশ্রæতিও নিয়েছে। সব প্রাথীর্র কাছ থেকেই কেন্দ্রভিক্তিক কমিটির বিস্তারিত একটি কপি নিয়ে কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শেষ পযর্ন্ত নিবার্চনী কেন্দ্রে থাকার বিষয়টিকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগারো দফা করণীয় নিদের্শনায় পোলিং এজেন্টদের সারা দিনের করণীয় বলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র, পোলিং এজেন্ট কাডর্ এবং মামলার জামিনের কাগজপত্র, প্রয়োজনীয় অথর্, খাবার, ভোটার তালিকা, কাগজ ও কলম সঙ্গে নিয়ে সকাল সাতটায় প্রস্তুত হয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে পোলিং এজেন্ট হওয়ার বৈধতা নিশ্চিত করা। এছাড়া অন্য কাজের মধ্যে প্রথমে ব্যালট বক্সের হিসাব নেয়া, ব্যালট পেপার ও সেন্টারের ভোটার সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা, চিহ্নিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কমীর্রা ভোট দেয়ার সময় কোনো অতিরিক্ত ব্যালট পেপার যেন বক্সে না ঢুকায় সেই দিকে খেয়াল রাখা, প্রতিটি স্বচ্ছ বক্স লক করে নম্বর নিয়ে তা কাগজে লিখে রাখা, ভোট শেষে বক্স লক করে নম্বর লিখে রাখা, প্রতিপক্ষের ৮০টি ব্যালট পেপার আর নিজেদের ১০০ হিসাবে দেখানো হতে পারে সেদিকে নজর রাখা, কোনো পুলিশ সিভিল ড্রেসে এলে এবং প্রতিপক্ষের কমীর্র সঙ্গে জোর করে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাত বলে চিৎকার করে বাইরের সাহায্য নিশ্চিত করা, এক সেকেন্ডের জন্যও বাইরে বের না হওয়া, গণনার পর নতুন ধরনের ভোট ডাকাতি হতে পারে সেদিকেও নজর রাখা, প্রতিটি বুথে ভোটসংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার ও বক্স বুঝে নেয়া। নিদের্শনায় আরও বলা হয়েছে, ভোট শেষে মূল পোলিং এজেন্টকে ব্যালট পেপার-বক্সসহ আগের সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। মূল পোলিং এজেন্ট ভোট গণনার পর ভোট বুঝে না পাওয়া পযর্ন্ত কোনো প্রকার স্বাক্ষর দেয়া থেকে বিরত থাকা। সূত্রমতে, নিবার্চনী কাযর্ক্রমের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি নিবার্চন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি আসনে কেন্দ্রভিত্তিক একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে দলের নিবার্চনী প্রতিশ্রæতি, ক্ষমতাসীনদের গত দশবছরের নানা অনিয়মের বিষয় ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে একটি লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে প্রতিটি ঘরে এ লিফলেট পৌঁছে দেয়া হবে। অন্যদিকে নিবার্চনী ইশতেহার তৈরি কাজ প্রায় শেষ পযাের্য়। তারুণ্যের জন্য পরিকল্পনা, অথৈর্নতিক উন্নয়নসহ ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার কমিটির খসড়া স্টিয়ারিং কমিটিতে পাঠিয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে স্টিয়ারিং কমিটি ইশতেহার অনুমোদন করবে।