ফড়িয়াদের কব্জায় ধানের বাজার

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ১৯ মে ২০২২, ০৯:১৬

আলতাব হোসেন

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। বোরোর ভরা মৌসুমে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে কোথাও কোথাও ৭০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচই ওঠছে না কৃষকের। নতুন চাল বাজারে আসার পরও চালের বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। অথচ কৃষকরা পাচ্ছেন না ধানের ন্যায্য মূল্য। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ কৃষক। পড়তি দামের তেতো অভিজ্ঞতায় বিরক্ত কৃষক। গত বছরও বোরো ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচের অর্ধেকও পাননি কৃষক। হাওড় অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় কৃষকের গোলায় সোনা রঙা বোরো ধান গড়াগড়ি খাচ্ছে। কৃষকের মুখে হাসি। তবে হাটে গিয়ে কৃষকের সেই খুশি উবে যাচ্ছে। চালকল মালিক ও সরকারি গুদামে পুরোপুরি ধান না কেনার কারণে ধানের দরপতন চলছে। কৃষকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক ঋণ না মেলায় চাতালকল মালিকরাও ধান কিনছেন না। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাট, মাগুরা ও সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকার কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা। এসব এলাকায় মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে ধান কিনছেন পাইকাররা। কৃষকদের দাবি, এই দামে ধান বিক্রি করে তাদের খরচই ওঠছে না। কৃষকের অভিযোগ, সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান কিনলেও সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে গিয়ে তাদের পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। নেতা ধরেও তারা ধান বিক্রি করতে পারেন না। গত সোমবার স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী হাওড়াঞ্চলের ধানের বাজার পরির্দশন শেষে ধানের দাম ৭০০ টাকার নিচে শুনে হতাশা প্রকাশ করেন। বোরো ধান হলো সুনামগঞ্জ হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের প্রধান ও একমাত্র অর্থকরী ফসল। বছরের একটি মাত্র ফসল ধান খোরাকির জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে সারা বছর চলতে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। এবার আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন, তার দামে ক্ষুব্ধ কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার প্রায় ২০টি উপজেলা থেকে নতুন ধান নিয়ে কৃষক ও পাইকাররা ভৈরব বাজারে যাচ্ছেন। হাওড়ের সঙ্গে নদীপথে ভৈরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ট্রলারযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। ভৈরব বাজারের প্রায় শতাধিক আড়তে এসব ধান বিক্রি হচ্ছে। ধান নিয়ে এসেছেন দুর্গাপুরের বারমারি গ্রামের সুরেশ রিছিল। তিনি বলেন, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে গড়ে ৯শ' টাকা। অথচ বাজারে ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা আর শুকনা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরবে নতুন ধান বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক সোবান মিয়া। তিনি বলেন, ধান লাগানো থেকে শুরু করে সেচ-সার-কীটনাশক ও ধান কাটা ও পরিবহণ খরচ বিঘাতে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এবার ধান উৎপাদন হয়েছে ৪২ মণ। প্রতি মণ ৬৫০ টাকায় হিসেবে বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ অঞ্চলের কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ধান রোপণ করেন। মহাজনের সুদ দিতে গিয়ে আরও খারাপ অবস্থায় পড়েন কৃষকরা। এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে ধান কাটছেন। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসানের পালস্না ভারি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। জয়পুরহাটের কালাইয়ের কৃষক আবু বক্কর মিয়া বলেন, এবার চিকন ধান এক বিঘাতে ৩০ থেকে ৩২ মণ হয়েছে। এখন বর্তমান বাজারে ৭০০ টাকা মণ। বোরো এক বিঘা জমিতে বর্গা নিয়ে আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। নিজের পরিশ্রম ও মজুরি ছাড়াই এই লোকসান হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্র্রমিক সংকটে পড়েছেন গাজীপুরের কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক মিজান সরকার বলেন, পাকিতে ১৪ মণ ধান পেয়েছি। বর্গা করায় জমির মালিককে অর্ধেক দিতে হয়েছে। কামলাদের দিনপ্রতি ১ হাজার টাকা বা বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা খরচের পর নিজের কিছুই থাকে না। বাগেরহাটে ধান কাটা শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের মধ্যে এক হাজার টাকায় শ্রমিক মিলছে। ৭০০ টাকা মণে ধান বিক্রি করে মজুরি দিতে গেলে তিন বেলার খাবারসহ প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করতে হয় প্রতিদিন একজন শ্রমিকের জন্য। মজুরির পাশাপাশি দিতে হচ্ছে তিন বেলার খাবার। বাজারে ধানের মূল্য না থাকায় কৃষক উৎপাদন খরচই উঠাতে পারছেন না। ধানের দাম না থাকায় চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। হাওড় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নতুন মোটা ধান সর্বোচ্চ ৬৫০, চিকন ধান সর্বোচ্চ ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯শ' টাকা। বর্তমান বাজারদরে উৎপাদন খরচ উঠছে না তাদের। এনজিও'র সুদ ও মহাজনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন। এ নিয়ে অনেক কৃষক দুশ্চিন্তায় আছেন। নেত্রকোনা দুর্গাপুরের শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আবু সামা বলেন, গত শনিবার ধানের বড় হাট ঝানঞ্জাইল বাজারে শুকনা চিকন ধান ৬৭০ টাকা মণে বিক্রি করেছি। সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান কিনছে। নেতা ধরেও আমি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারিনি। বাজারেও ধান কেনার লোক নাই। বাধ্য হয়ে ফড়িয়াদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, ধান কাটতে একজন কৃষি শ্রমিকের দিনে মজুরি দিতে হয়েছে এক হাজার টাকা। সকাল ও দুপুরে খাবারও দিতে হয়েছে। একমণ ধান বেচে একজন কামলার এক দিনের বেতন হচ্ছে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার কৃষকরা লোকসানের মুখে তাদের ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নেত্রকোনার কলমাকান্দার লেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক অজিত হাজং বলেন, বাজারে ধান কেনার ক্রেতা কম। বেপারীরা ধান কিনছে না। তাই ধানের দাম প্রতিদিনই কমছে। এই সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়ারা। তারা ধান কিনে মজুত করছেন। মাগুরা, যশোর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, যশোর, মাগুরার কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা ধানের দামে চরম ক্ষুব্ধ। বাজারে ক্রেতা না থাকায় লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ডিঙ্গাপুতা বিলের কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ধানের বাজার ফড়িয়াদের কব্জায় চলে গেছে। চাতালকলগুলোকে সরকার ধান কিনতে চাপ ও ব্যাংক ঋণ না দিলে পুরোধান বাজারে ওঠলে ধানের দাম তলানিতে চলে যাবে। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরের কৃষক অজিত পাল বলেন, উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিমণ ধান ৬৫০ থেকে ৭০০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বোরো ধানের প্রকারভেদে এবার দাম মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল গ্রামের কৃষক আজমত আলী বলেন, স্থানীয় বাজারগুলোতে বোরো বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। এলাকার কৃষকরা এবারও লোকসানে ধান বিক্রি করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে দেশে ৬ লাখ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ম আলতাব হোসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। বোরোর ভরা মৌসুমে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে কোথাও কোথাও ৭০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচই ওঠছে না কৃষকের। নতুন চাল বাজারে আসার পরও চালের বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। অথচ কৃষকরা পাচ্ছেন না ধানের ন্যায্য মূল্য। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ কৃষক। পড়তি দামের তেতো অভিজ্ঞতায় বিরক্ত কৃষক। গত বছরও বোরো ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচের অর্ধেকও পাননি কৃষক। হাওড় অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় কৃষকের গোলায় সোনা রঙা বোরো ধান গড়াগড়ি খাচ্ছে। কৃষকের মুখে হাসি। তবে হাটে গিয়ে কৃষকের সেই খুশি উবে যাচ্ছে। চালকল মালিক ও সরকারি গুদামে পুরোপুরি ধান না কেনার কারণে ধানের দরপতন চলছে। কৃষকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক ঋণ না মেলায় চাতালকল মালিকরাও ধান কিনছেন না। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের জীবনে অতিপরিচিত ঘটনা। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাট, মাগুরা ও সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকার কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা। এসব এলাকায় মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে ধান কিনছেন পাইকাররা। কৃষকদের দাবি, এই দামে ধান বিক্রি করে তাদের খরচই ওঠছে না। কৃষকের অভিযোগ, সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান কিনলেও সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে গিয়ে তাদের পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। নেতা ধরেও তারা ধান বিক্রি করতে পারেন না। গত সোমবার স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী হাওড়াঞ্চলের ধানের বাজার পরির্দশন শেষে ধানের দাম ৭০০ টাকার নিচে শুনে হতাশা প্রকাশ করেন। বোরো ধান হলো সুনামগঞ্জ হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের প্রধান ও একমাত্র অর্থকরী ফসল। বছরের একটি মাত্র ফসল ধান খোরাকির জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে সারা বছর চলতে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। এবার আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। যতটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন, তার দামে ক্ষুব্ধ কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার প্রায় ২০টি উপজেলা থেকে নতুন ধান নিয়ে কৃষক ও পাইকাররা ভৈরব বাজারে যাচ্ছেন। হাওড়ের সঙ্গে নদীপথে ভৈরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ট্রলারযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। ভৈরব বাজারের প্রায় শতাধিক আড়তে এসব ধান বিক্রি হচ্ছে। ধান নিয়ে এসেছেন দুর্গাপুরের বারমারি গ্রামের সুরেশ রিছিল। তিনি বলেন, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে গড়ে ৯শ' টাকা। অথচ বাজারে ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা আর শুকনা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরবে নতুন ধান বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক সোবান মিয়া। তিনি বলেন, ধান লাগানো থেকে শুরু করে সেচ-সার-কীটনাশক ও ধান কাটা ও পরিবহণ খরচ বিঘাতে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এবার ধান উৎপাদন হয়েছে ৪২ মণ। প্রতি মণ ৬৫০ টাকায় হিসেবে বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ অঞ্চলের কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ধান রোপণ করেন। মহাজনের সুদ দিতে গিয়ে আরও খারাপ অবস্থায় পড়েন কৃষকরা। এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে ধান কাটছেন। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসানের পালস্না ভারি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। জয়পুরহাটের কালাইয়ের কৃষক আবু বক্কর মিয়া বলেন, এবার চিকন ধান এক বিঘাতে ৩০ থেকে ৩২ মণ হয়েছে। এখন বর্তমান বাজারে ৭০০ টাকা মণ। বোরো এক বিঘা জমিতে বর্গা নিয়ে আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। নিজের পরিশ্রম ও মজুরি ছাড়াই এই লোকসান হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্র্রমিক সংকটে পড়েছেন গাজীপুরের কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক মিজান সরকার বলেন, পাকিতে ১৪ মণ ধান পেয়েছি। বর্গা করায় জমির মালিককে অর্ধেক দিতে হয়েছে। কামলাদের দিনপ্রতি ১ হাজার টাকা বা বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা খরচের পর নিজের কিছুই থাকে না। বাগেরহাটে ধান কাটা শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের মধ্যে এক হাজার টাকায় শ্রমিক মিলছে। ৭০০ টাকা মণে ধান বিক্রি করে মজুরি দিতে গেলে তিন বেলার খাবারসহ প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করতে হয় প্রতিদিন একজন শ্রমিকের জন্য। মজুরির পাশাপাশি দিতে হচ্ছে তিন বেলার খাবার। বাজারে ধানের মূল্য না থাকায় কৃষক উৎপাদন খরচই উঠাতে পারছেন না। ধানের দাম না থাকায় চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। হাওড় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নতুন মোটা ধান সর্বোচ্চ ৬৫০, চিকন ধান সর্বোচ্চ ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯শ' টাকা। বর্তমান বাজারদরে উৎপাদন খরচ উঠছে না তাদের। এনজিও'র সুদ ও মহাজনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন। এ নিয়ে অনেক কৃষক দুশ্চিন্তায় আছেন। নেত্রকোনা দুর্গাপুরের শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আবু সামা বলেন, গত শনিবার ধানের বড় হাট ঝানঞ্জাইল বাজারে শুকনা চিকন ধান ৬৭০ টাকা মণে বিক্রি করেছি। সরকার ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান কিনছে। নেতা ধরেও আমি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারিনি। বাজারেও ধান কেনার লোক নাই। বাধ্য হয়ে ফড়িয়াদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, ধান কাটতে একজন কৃষি শ্রমিকের দিনে মজুরি দিতে হয়েছে এক হাজার টাকা। সকাল ও দুপুরে খাবারও দিতে হয়েছে। একমণ ধান বেচে একজন কামলার এক দিনের বেতন হচ্ছে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার কৃষকরা লোকসানের মুখে তাদের ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নেত্রকোনার কলমাকান্দার লেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক অজিত হাজং বলেন, বাজারে ধান কেনার ক্রেতা কম। বেপারীরা ধান কিনছে না। তাই ধানের দাম প্রতিদিনই কমছে। এই সুযোগ নিচ্ছেন ফড়িয়ারা। তারা ধান কিনে মজুত করছেন। মাগুরা, যশোর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, যশোর, মাগুরার কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা ধানের দামে চরম ক্ষুব্ধ। বাজারে ক্রেতা না থাকায় লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ডিঙ্গাপুতা বিলের কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ধানের বাজার ফড়িয়াদের কব্জায় চলে গেছে। চাতালকলগুলোকে সরকার ধান কিনতে চাপ ও ব্যাংক ঋণ না দিলে পুরোধান বাজারে ওঠলে ধানের দাম তলানিতে চলে যাবে। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরের কৃষক অজিত পাল বলেন, উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিমণ ধান ৬৫০ থেকে ৭০০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বোরো ধানের প্রকারভেদে এবার দাম মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল গ্রামের কৃষক আজমত আলী বলেন, স্থানীয় বাজারগুলোতে বোরো বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। এলাকার কৃষকরা এবারও লোকসানে ধান বিক্রি করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে দেশে ৬ লাখ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিয়েছে সরকার। উৎপাদন বাড়াতে এবার বোরোতে ১৫ লাখ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমে উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন ধান উৎপাদনের। এ জন্য ৪৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়। এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কিনবে। ধান উৎপাদনে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিয়েছে সরকার। উৎপাদন বাড়াতে এবার বোরোতে ১৫ লাখ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমে উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন ধান উৎপাদনের। এ জন্য ৪৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়। এদিকে চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কিনবে।