শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সিলেটে বানভাসিদের ভোগান্তি বেড়েছে

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২০ মে ২০২২, ০০:০০
চলমান বন্যায় সিলেটের বিভিন্ন এলাকা নতুনভাবে পস্নাবিত হচ্ছে। ছবিটি বৃহস্পতিবার সিলেট-ছাতক মহাসড়ক থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

উজানের দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদু্যৎ নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে পড়েছে। পস্নাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় এসব উপজেলায় মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে সিলেটে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। সিলেট শহরেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে বন্যাকবলিত উপজেলাসমূহের মানুষদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কারণে দুই জেলায় মোট ৮৭৩টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৪১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৮৫টি মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসা বন্যার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫টি প্রতিষ্ঠান বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা আবুল কাশেম মুন্সি বলেন, গত চার দিন ধরে এলাকায় বিদু্যৎ নেই। এক ধরনের ভুতুড়ে পরিস্থিতি চলছে। নগরের ঘাসিটুলার রাস্তা তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি রয়েছে। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে দূরের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় চলে যাচ্ছে। বন্যার কারণে রাস্তায় হাঁটু পানি থাকায় কলাগাছ দিয়ে ভেলা তৈরি করে চলাচল করছে মানুষ। এ ছাড়া নগরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে।

\হএতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী।

এ ছাড়ও সিলেট ফায়ার সার্ভিস অফিস, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়, কোতোয়ালি থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদু্যতের আঞ্চলিক কার্যালয়, দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি সাবস্টেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। সিলেট নগর ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এখন পানি।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, সরকার বন্যাদুর্গতদের পাশে রয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যায় ২৫২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার বানভাসিদের ভোগান্তি কমাতে পাশে আছে। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আরও দুইদিন অব্যাহত থাকবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানিও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংশ, ধনু-বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানি অতিদ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, পর্যবেক্ষণাধীন নদ-নদীর ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৮১ পয়েন্টে। আর ২২টি পয়েন্টে পানি কমছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি স্টেশনের পানি। এ ছাড়া পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আমাদের সিলেট অফিস জানায়, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল, অব্যাহত বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়ে সিলেট নগরে বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন ও পানিবন্দি ভানভাসি মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। সিলেট জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পস্নাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বিদু্যৎ বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে কিছু এলাকার বিদু্যতের খুঁটির গোড়ার মাটি নরম হয়ে হেলে পড়েছে। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ভোরের ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালার ডাল ভেঙে বিদু্যতের তারে পড়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। তাই জেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। সিলেটে বরইকান্দি সাবস্টেশন ও শাহজালাল উপশহরে একটি ফিডার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব স্টেশন পুরো চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর মূল সড়কে কোমড় সমান পানি। প্রাইভেটকার, অটোরিকশা (সিএনজি) বা রিকশা দিয়ে চলাচল করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ মোটর সাইকেল দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও মধ্যরাস্তায় গিয়ে পানিতে আটকে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় উপশহরের কয়েকটি বস্নকে দেখা মিলল নৌকা। গতকাল বিকাল থেকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা।

ওই এলাকার বাসিন্দা শ্রাবণী দাস বলেন, 'কলেজের কাজে বের হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তায় যে পরিমাণ পানি রয়েছে, এতে গাড়ি দিয়ে যেতে পারছি না।' তাই বাধ্য হয়ে নৌকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।

সালেহ আহমদ নামের আরেকজন বলেন, 'এই মুহূর্তে নৌকাই আমাদের চলাচলের একমাত্র বাহন। সকাল থেকে অনেকেই নৌকা দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন।'

সিসিকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সিলেট ফিরেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মহানগরীর পস্নাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সিসিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন্যাকবলিত নগরীর এলাকাগুলোতে খাবার পানির সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে পাবিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের দোরগোড়ায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাঠানো হয়েছে। খাবার পানির সংকট নিরসনে সিসিকের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বাড়ানো হবে আশ্রয় কেন্দ্র।

এদিকে উপশহর ছাড়াও নগরীর ছড়ারপার, সিলেট সার্কিট হাউস-তালতলা ভিআইপি রোডের তালতলা, সোবহানীঘাট, কলাপাড়া, শামিমাবাদ আবাসিক এলাকা, বাঁধেরমুখ, গোটাটিকর, সাদাটিক, শাপরাণ, কালিঘাট, বেতবাজার, তেরতন, শাহজালাল উপশরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে মানুষ। সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। পানির নিচে তলিয়ে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে আছেন মানুষ। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে অনেকে তাদের বাসা বাড়ি ছেড়ে অন্যস্থানে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনো তা বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান সুনামগঞ্জে আবারও বেড়েছে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ। বৃহস্পতিবার সকালে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহলস্না পস্নাবিত হচ্ছে। শহরের নবীনগর, তেঘরিয়া, মলিস্নকপুর, কালিপুর, হাসনবাহার, বড়পাড়া, হাজিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানি ডুকছে বাসা বাড়িতে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। নতুন করে বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসন ১৪০ টন চাল, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা বিতরণ করছে। সুনামগঞ্জে নতুন করে আরও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পস্নাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের লবজান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় পস্নাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শহরের হাসননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যাশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পস্নাবিত হওয়ায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী উপচে বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে মানুষের বাড়ির বসতঘরে পানি ঢুকছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৮৫টি ঘর রয়েছে পানিবন্দি। বসতঘরসহ বানের জলে ভেসে গেছে বিভিন্ন হাটবাজার, রাস্তাঘাট, মসজিদ, রেলস্টেশনসহ তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এবং পাকা ধানসহ সবজি ক্ষেত। সুরমা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে আকিলপুর-রাজাপুরসহ গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর। বৃহস্পতিবার উপজেলার লামাকাজী-খাজাঞ্চী-অলংকারী এই তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা যায়। ওই ইউনিয়নগুলোকে বন্যাকবলিত এলাকা ঘোষণা করে শিগগিরই বন্যার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী প্রদানের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিন জনপ্রতিনিধি।

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় অবিরাম বৃষ্টি ও বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উপজেলাবাসী। গত ৭ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিতে উপজেলার জমি এখন পানিতে সয়লাব। সবজি ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিদু্যৎ বিভ্রাটে জন-জীবনের দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। অবিরাম বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ ৯০ ভাগ জমিই এখন পানির নিচে। উপজেলার অধিকাংশ পুকুর ও ডোবার মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢলের তান্ডব শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন হাওড়ের কৃষকরা। গত ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাওড়পারের কৃষকরা। রোদের দেখা না মেলায় মাড়াই করা ধানে অঙ্কুর দেখা দিয়ে তা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। কাটা ধানের স্তূপ পড়ে আছে খলায়। ধান মাড়াই না করতে পেরে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টিতে শেষ মহূর্তে বোরো ধান তুলতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টির জন্য জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অফিসসহ সর্বত্র উপস্থিতি তুলনামূলক কম। বৃষ্টির কারণে গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলো কাদাযুক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ভেজা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। খলা ডুবে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ধান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ কেউ পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কেটে নৌকা দিয়ে পাড়ে তুলছেন।

পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর পোরশা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পুনর্ভবা নদী ঘেঁষে কৃষকদের প্রায় শত বিঘা জমির বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা ও ঢলের পানিতে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ফলে জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নিতপুর ও ছাওড় ইউনিয়নের পুনর্ভবা নদী এলাকার অনেক গ্রামের অসহায় কৃষককে তলিয়ে যাওয়া ধানের জমিতে গিয়ে ধান না নিয়ে ফিরিয়ে আসতে হয়েছে। অনেক কৃষককে আবার তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের ধান সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সরেজমিন সীমান্তবর্তী গ্রাম সুহাতি, নিতপুর, পশ্চিম দুয়ারপাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অসহায়ের মতো জমির দিকে ছুটছেন। পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে পারঘাটি, রংসদা বিল, লিলমারি, মাটিকাটা বিল এলাকা। এলাকাগুলোর ধান কেটে কৃষকরা পানির মধ্যেই স্তুপ করে রেখেছেন। এতে জমির ধান বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে যাবে বলে তারা বলছেন। নিতপুরের কৃষক নুরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন, আকবর আলী জানান, বিলগুলোতে তারা কয়েক বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে দেরি হওয়ায় দুই-একদিনের মধ্যে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তাদের এবং অসংখ্য কৃষকের জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে