শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিকে হালদার ইসু্যতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ভারত যাবে কমিটি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ মে ২০২২, ০০:০০

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে দেশে ফেরাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

পি কে হালদার গ্রেপ্তারসহ তার বিষয়ে যেসব তথ্য জানা যাচ্ছে, তা বিস্তারিত জানতে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)

ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেছেন, 'এটা এ বিষয়ে (পি কে হালদার) সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রথম বৈঠক। আন্তঃমন্ত্রণালয় এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাবাসন আইন আছে, তা ব্যবহার করে কিভাবে তাকে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে দুদক একা নয়, তাকে বাংলাদেশে ফেরাতে বাংলাদেশের সব বডি একসঙ্গে কাজ করবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অপরাধ বিভাগকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে তারা পি কে হালদার আসলে ভারতে কত টাকা পাচার করেছেন, সে বিষয়ে ভারতের ইডির (ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) কাছ থেকে তথ্য নেয়।

এদিকে, ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত। এই মামলা নিয়ে আলোচিত পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মোট ৪০টি মামলা দায়ের করে দুদক।

এবারের মামলায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এমএ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুন্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিলস্নাহ, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার।

ঘটনার বিবরণীতে বলা হয়েছে, দিয়া শিপিং লিমিটেডের এমডি শিব প্রসাদ ব্যানার্জি ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অপর আসামি মো. রাসেল শাহরিয়ার বরাবর ছয় বছরের জন্য ৪৪ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩২ ডেসিমেল জমি দেখানো হয়। ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে অনুমোদনের জন্য ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপস্থাপন করেন রাসেল।

পরে ১৬৩তম বোর্ড সভায় ঋণ প্রদানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বোর্ড সভায় উপস্থিত হয়ে কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই ঋণ প্রদানের জন্য পরিচালক এম . এ হাফিজ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, তৎকালীন পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দী, অঞ্জন কুমার রায়, অরুণ কুমার কুন্ডু, মো. মোস্তাইন বিলস্নাহ, সত্য গোপাল পোদ্দার মো. রাসেল শাহরিয়ারকে দায়ী বলে মনে করছে দুদক।

ঋণ অনুমোদনের পর ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়া শিপিং লিমিটেডের অনুকূলে ঋণ ছাড় করা হয়েছে। পরে তা আত্মসাৎ করে পি কে হালদার সিন্ডিকেট। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ'র তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে।

বর্তমান মামলার অন্যতম আসামি এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি রাসেল শাহরিয়ারকে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে