ডুবছে ফরিদপুরের চরাঞ্চল

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ০০:০০

ম ফরিদপুর প্রতিনিধি
পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সৃষ্ট দেশের উত্তরাঞ্চলসহ যমুনার পানি বৃদ্ধিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদনদীতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। এতে করে পদ্মা, মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁর নিম্নাঞ্চলের (চরাঞ্চলের) বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলাতে শুরু করেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীগুলোয়। এক সপ্তাহ যাবৎ ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই নদীতে ৬.৬৯ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। আকস্মিক এই পানি চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান ক্ষেতে প্রবেশ করছে। চাষিরা অপরিপক্ব ফসল তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পদ্মার পানির বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর বিভিন্ন জমির ফসল। সরেজমিন রোববার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষিরা অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন। এ ছাড়া ধান এবং তিলও তুলতে দেখা যায়। নদীর অপরপ্রান্তেও তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। পালডাঙ্গি এলাকার চাষি রমজান আলী ভূইয়া বলেন, আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। গত ৪-৫ দিন পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেত। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এগুলো এখন গরু, ছাগলকে খাওয়াব। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আরেক চাষির স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, 'এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের সারাবছরের সংসার খরচ চলে, কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেল। গত কয়েকদিন যাবৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে।' আরেক চাষি শেখ জুলমত হোসেন বলেন, '১০ বিঘা জমিতে বাদাম ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর মাত্র ১০ দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে ওঠাতে পারতাম। পানি বৃদ্ধির ফলে এখনই তুলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু আমাদের এলাকা নয়, চরাঞ্চলের একশ একরের বেশি জমিতে লাগানো বাদাম, তিল ও ধান নষ্ট হয়ে গেছে।' চাষি মুরাদ হোসেন বলেন, 'চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সারা বছরের সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেল।' ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, 'হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাদাম চাষ করে থাকে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।' পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার সালমা খাতুন জানান, বর্তমানে পদ্মার পানি ৬.৬৯ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর ৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডক্টর মো. হযরত আলী বলেন, 'আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।' ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পদ্মায় এ সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। ৭ দিনে দুই মিটার পানি বেড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।