মাঙ্কিপক্স নিয়ে দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই এবার নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশের শতাধিক ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন এই রোগে। বাংলাদেশে যেন রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ সব বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ আসলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া অতিদ্রম্নত যেন তাকে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এত প্যানিক (আতঙ্ক) হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি করব। জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, আমরা যখন কোনো নির্দেশনা দেই, তখন সেটি জেলা সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়েই চলে যায়। সব জেলায় ল্যান্ড পোর্ট (স্থলবন্দর) নাই, যেসব জেলায় আছে সেগুলোকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ, ভাইরাসটিতো মূলত স্থলবন্দর দিয়ে আসে, তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স এর রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নতুন রোগ নয় তবে পূর্বে এ ধরনের রোগী পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে এন্ডেমিক হিসেবে ধরা হয়েছে। পূর্বে শুধুমাত্র পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে ভ্রমণকারীদের বা বাসিন্দাদের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই দেশসমূহে ভ্রমণের ইতিহাস নেই, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী এমন ব্যক্তিদের মাঝে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। নির্দেশনায় আরও জানানো হয়, যে সব রোগীর মধ্যে ফুসকুড়ি দেখা যায় এবং সম্প্রতি মাঙ্কিপক্সের নিশ্চিত কেস আছে এমন দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন, অথবা এমন কোনো ব্যক্তি বা লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেছে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন- এমন রোগীদের মাঙ্কিপক্সের জন্য সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সন্দেহজনক ও লক্ষণযুক্ত রোগীকে কাছের সরকারি হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর এ তথ্য প্রেরণ করতে হবে। এদিকে, প্রতিদিনই বাড়ছে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ, গত ১৩ মে থেকে এ পর্যন্ত ১২টি দেশে ৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে যারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত। এমতাবস্থায় সংক্রামক এ রোগ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ সংস্থাটি এমন দেশগুলোতে নজরদারি বাড়াবে যেখানে সাধারণত এই রোগটি পাওয়া যায় না। এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্স প্রসঙ্গে জানায়, 'উপলব্ধ তথ্য থেকে বোঝা যায় যে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে। ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা লক্ষণযুক্ত তারা আক্রান্ত হচ্ছে।' ডবিস্নউএইচও আরও জানায়, 'পরিস্থিতি দ্রম্নত পাল্টাচ্ছে এবং ডবিস্নউএইচও আশা করে যে নন-এনডেমিক দেশগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হলে মাঙ্কিপক্সের আরও কেস শনাক্ত হবে। যে সব ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হতে পারেন, তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে জানানোর উপর তাৎক্ষণিকভাবে নজর দিতে হবে। এই সংক্রমণ যাতে আরও না ছড়িয়ে পড়ে, তা বন্ধ করতে হবে।'