রসুনের ডাবল সেঞ্চুরি!

ডলারের দাম বাড়ায় নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে। ঈদের আগে আমদানি করা রসুনের চালান খালাস হলেও তা বাজারে না ছাড়ার অভিযোগ সাধারণ ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ মে ২০২২, ০৯:১১

রেজা মাহমুদ

ঈদের পর থেকেই একের পর এক বাড়ছে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের দাম। তেল, পেঁয়াজ, আটা, ময়দা ও ডাল ও চালের পর এবার দাম বেড়েছে রসুনের। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি ২ সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ৮০ টাকা এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকা পর্যন্ত। সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে আমদানিকৃত চীনা রসুনে কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার ওপরে এবং পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৭৫ টাকা দরে। অন্যদিকে মানভেদে দেশি রসুন খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা আর পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। অথচ ৩ দিন আগেও খুচরা বাজারে চীনা রসুনের কেজি ১৪০ এবং দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। যা পাইকারিতে ছিল যথাক্রমে ৮০ টাকা ও ৫৫ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মজুদ থাকা সত্ত্বেও আমদানিকারকরা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের রসুনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। এখন প্রায় দ্বিগুণ টাকা বিনিয়োগ করেও মুনাফা আসছে আগের থেকেও কম। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাসে নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলা কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ আমদানিকৃত রসুনের জোগান এসেছে। ফলে বেড়েছে দেশি রসুনেরও দামও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি ব্যয় ও বন্দরের খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের আগে অর্ডারকৃত চালানগুলোর বেশিরভাগই এই মাসে খালাস করা হয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকরা তা মার্কেটে ছাড়ছে না এমন অভিযোগ সাধারণ ব্যবসায়ীদের। তাদের তথ্যমতে, বর্তমানে রসুনের যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তা দিয়ে অন্তত দেড় মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। একই কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ট্যারিফ কমিশন। মোহাম্মাদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রসুনের সরবরাহ ঠিক ছিল। কিন্ত দ্বিতীয় সপ্তাহে তা অর্ধেকে নেমে আসে এবং বৃহস্পতিবার থেকে তা আরও কমে ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসে। তবে দেশি রসুনের সরবরাহ থাকায় ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারছেন। এ বিষয়ে জানতে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ও রসুনের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান 'দ্য কর্নফুলী ইমপোটার্স লিমিটেডের' অফিসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মজুদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বন্দরে তাদেরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রসুনের অনেকগুলো চালান খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান সেখানকার কর্মকর্তারা। কারওয়ান বাজারের পাইকাররা জানায়, ঈদের পরও প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ টন রসুন বাজারে আসত। কিন্তু রোববার কারওয়ান বাজারে রসুনের কোনো চালানই আসেনি। মূলত দাম বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরাও কম পণ্য আনছেন। এ ছাড়া দামের কারণে অনেকেই দেশি রসুন কিনছেন। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমবে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। যার ৮০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়। চাহিদার বাকি অর্থাৎ ২০ শতাংশ রসুন আমদানি করতে হয়।